কোরআন নাযিলের ঘটনা

0


 আরবের উষ্ণ মরুভূমিতে জন্ম হযরত মুহাম্মদের (সা.)। এখানেই বেড়ে ওঠা। জন্মের ছয় বছরের মাথায় এতিম হয়েছেন। মাঝে দুই বছর দাদার কাছে থাকলেও, দাদার মৃত্যুর পর, আট বছর বয়স থেকে চাচা আবু তালিবের সংসারে আছেন।



 আরবের উষ্ণ মরুভূমিতে জন্ম হযরত মুহাম্মদের (সা.)। এখানেই বেড়ে ওঠা। জন্মের ছয় বছরের মাথায় এতিম হয়েছেন। মাঝে দুই বছর দাদার কাছে থাকলেও, দাদার মৃত্যুর পর, আট বছর বয়স থেকে চাচা আবু তালিবের সংসারে আছেন।


চাচা উত্তরাধিকার সূত্রে মক্কার উপাসনালয়ের প্রধান সেবায়েত। লাত, উজ্জা, মানাতসহ নানা রকম মূর্তিকে নিজেদের আশা-নিরাশার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছে এখানকার লোকেরা। প্রতিকূল এই মরুভূমিতে টিকে থাকতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় অধিবাসীদের। যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ এখানকার সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে, গোত্রকে রক্ষা করতে এখানে ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারলে চলে না। আরবের বুকে এসব দেখে দেখে মুহাম্মদ (সা.) ছোট্ট শিশু থেকে পূর্ণ যুবক হয়ে উঠলেন।


কিন্তু এরপরও তিনি ব্যাতিক্রম হয়ে আছেন তাঁর আচার-ব্যবহারে। ঠিক আরবসুলভ হৃদয়ের তিনি হতে পারেননি। ঝগড়া-বিবাদে তিনি নেই, মূর্তির উপাসনায়ও যান না, ন্যায় আচরণে সবাইকে মুগ্ধ করেন। তাই তো আরববাসী ভালবেসে তাঁকে 'আল-আমিন' (বিশ্বাসী) বলে ডাকে।



যৌবনে তিনি বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। তাঁর বয়স পঁচিশ হলেও স্ত্রীর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। মক্কার ধনী, বিদূষী, নাম্নী, বিধবা খাদীজাতুল কোবরা নিজেই মুহাম্মদকে (সা.) পছন্দ করেছেন। ঘর সংসারে মুহাম্মদ (সা.) অভ্যস্ত হয়ে গেলেও তাঁর মন পড়ে থাকত অন্য কোথাও। তিনি এমন কিছু খুঁজে বেঁড়ান, যার সন্ধান পরিচিত মহলে ছিল না। তিনি পাথরের দেবতা নয়, সত্যিকারের উপাস্যকে খুঁজে বেড়ান, শান্তির সুবাতাস বয়ে দিতে চান মানুষের জীবনে, উত্তপ্ত মরুভূমিতে শীতল ঝর্ণার ফোয়ারা ছুটাতে চান। কিন্তু কী করে সম্ভব এই জটিল কাজ?


সংসারধর্ম একপাশে রেখে প্রায়ই তিনি হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকেন। সব কোলাহল, সম্পর্কের টান, বাহ্যিক প্রয়োজন পেছনে ফেলে নিবিষ্ট চিত্তে মগ্ন হয়ে নিজেকে সঁপে দিতেন ভাবনার অতল দুনিয়ায়। এ ভাবনার কূল-কিনারা পাওয়া তো এত সহজ নয়! জগতের মুক্তির দর্শন খুঁজে পাওয়া বোধ করি মানুষের পক্ষে সবচেয়ে দুঃসাধ্য কর্ম। তবুও ক্ষান্ত দিলে তো চলে না।

একরাতে গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় দেখলেন, অদ্ভূত এক আলো তাঁর সামনে উপবিষ্ট। সেই আলো কথাও বলছে! বলছে, "পড়ুন"। মুহাম্মদ (সা.) এই ঘটনায় ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। গুহা ছেড়ে স্ত্রী খাদীজার কাছে এসে বললেন, "আমাকে বস্তাবৃত কর, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর।" নিজেকে চাদরে ঢেকে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে রইলেন।

পর পর আরো কয়েকদিন এই ঘটনা ঘটল। স্ত্রীর চাপাচাপিতে সব কিছু খুলে বললেন। খাদীজা অভয় দিলেন, "আপনি তো কাউকে কষ্ট দেননি, কখনো কারো সাথে অন্যায় করেননি, আপনার সাথেও কেউ অন্যায় করবে না, আপনি নির্ভয় থাকেন। নিশ্চয়ই এই ঘটনা কল্যাণ নিয়ে আসবে।"

https://assets.roar.media/assets/C1BuiO3zPGwK9oFB_1.jpg

 

কিছুদিন পর আবার গেলেন সেই গুহায়, আগের মতো একই ঘটনা ঘটল। এবার মুহাম্মদ (সা.) নির্ভয়ে বললেন, "আমি পড়তে জানি না।" ছোটবেলায় এতিম হওয়া মুহাম্মদ (সা.) প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সুযোগ পাননি, সেই সময়ের প্রচলিত অক্ষরজ্ঞানও তাঁর ছিল না। অতঃপর কথা বলা সেই উজ্জ্বল আলো তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর কী যেন হয়ে গেল, মুহাম্মদ (সা.) নিজের মধ্যে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন টের পেলেন, দুনিয়া কাঁপানো আত্মবিশ্বাস তাকে ঘিরে ধরল, অসীম প্রাণশক্তিতে তিনি পরিপূর্ণ হলেন। এরপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলা সেই আলোকের সাথে সাথে তিনিও পড়তে লাগলেন। সেদিনের মতো পড়া সমাপ্ত হলো পাঁচটি বাক্যে। সেই পাঁচ বাক্য ছিল মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম নাযিলকৃত আয়াত (বাক্য)।

মুহাম্মদের (সা.) ভাবনার নতুন দিগন্ত রচিত হলো। যে সত্য, ন্যায়, শান্তুির বার্তা তিনি এত বছর খুঁজে বেড়িয়েছেন, আজ বুঝি তা পাওয়া গেল! বরাবরের মতো স্ত্রী খাদীজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। স্ত্রী-ও যেন নতুন কোনো মুহাম্মদের (সা.) দেখা পেলেন। যে মুহাম্মদ (সা.) শুধু তার স্বামীই নন, দো-জাহানের মুক্তির দূত হয়ে গেলেন। খাদীজা তার চাচাত ভাই ধর্মপরায়ণ খ্রিস্টান পাদ্রী ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন স্বামীকে। ওয়ারাকা মুহাম্মদ (সা.) এর মুখে সব ঘটনা শুনে বললেন, "তুমি সত্য নবী, একদিন সারা জাহান জয় করবে, হায় আফসোস, আমি যদি তোমার নবুওয়াতের সময় বেঁচে থাকতাম!" এর কিছুদিন পরই ওয়ারাকা মারা যান।

এরপর শুরু হলো নতুন ইতিহাস রচনার দিন; শ্বাশত, সত্য, সুন্দর ইসলামের বাণী দিকদিগন্তে ছড়িয়ে দেয়ার কঠিন সময়। সেই পথ মসৃণ তো ছিলই না, ছিল অসীম শ্বাপদসংকুল। সব বাঁধা জয় করে একদিন মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী মক্কা বিজয় করলেন, রচিত হলো ইসলামের বিজয় ইতিহাস, আরব ছাড়িয়ে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হলো সারা দুনিয়ায়।

শ্বাশত, সত্য, সুন্দর সেই অলৌকিক বাক্যগুলো ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) প্রতি ঐশী বাণী। বাকি জীবনভর তাঁর কাছে আসতে লাগল এই বানী, যা আজ মুসলমানেরা আল কোরআন হিসেবেই জানে। এই ঐশী বাণীর সূচনা হয়েছিল পাঁচটি বাক্য দিয়ে। জেনে নেয়া যাক সেই পাঁচ বাক্য:

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)


১. পড়ুন, আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।
২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাঁধা রক্তপিন্ড থেকে।
৩. পড়ুন, আপনার প্রভু অত্যন্ত দয়াময়।
৪. যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে।
৫. শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।
- সূরা আলাক (৯৬:১-৫)

 

মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, যিনি ঐশী বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর নবুয়তী জীবন ছিল তেইশ বছরের। তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ, যেটি বিদায় হজ্জ নামে পরিচিত, হজ্জব্রত পালনরত হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, তাকে যে বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ্‌ দিয়েছেন, তিনি তা সফলভাবে পৌঁছে দিতে পেরেছেন কি না, তিনি তাঁর কর্তব্য পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ করতে পেরেছেন কি না। সেদিন উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠে, "হ্যাঁ, আপনি পেরেছেন।" সেদিন মুহাম্মদের (সা.) প্রতি আল কোরআনের কিছু আয়াত নাযিল হয়,

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের জন্য আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম।

- সূরা মায়িদা (৫:৩)

উপস্থিত জনতা মুহাম্মদের (সা.) পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছে যে তিনি তার কর্তব্য পালন করেছেন। সেদিন আল্লাহও আল কোরআনের আয়াত দিয়ে মুহাম্মদ (সা.)-কে আশস্ত করলেন, আপনি পেরেছেন। এরপর থেকে দুনিয়ার মুসলিমরা স্বাক্ষী দিচ্ছে, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর দায়িত্ব পালনে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হয়েছেন। এখন তাঁর সকল অনুসারীর দায়িত্ব সত্য ও ন্যয়ের বাণী অন্যদের মাঝে পৌঁছে দেয়া, কেয়ামত পর্যন্ত যে ধারা চলমান থাকবে।



Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

Search This Blog

LATEST IN TECH

Technology/feat-big

Facebook SDK

  • https://connect.facebook.net/en_US/sdk.js#xfbml=1&version=v9.0

Text

About Me

My Photo
RIR DEVELOPER COMPANY
View my complete profile

Main Tags

Followers

Categories

Categories

Subscribe Us

Pages