Thise-is-isalm |
“হাসবি রাব্বি জাল্লাল্লাহ, মাফি কালবি গাইরুল্লাহ”, সমাজে প্রচলিত বা জনপ্রিয় এই ইসলামিক গান/সঙ্গীত বা গজল বা নাশিদ এর মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি বা মিথ্যাচার
এখানে বলা হয়েছে “হাসবি রাব্বি জাল্লালাহ” এর অর্থ: “সুমহান প্রতিপালক আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।” উক্ত বাক্যটি অর্থগত ঠিক আছে। “মাফি কালবি গায়রুল্লাহ” অর্থ: “আমার অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কিছু নাই।” এটি আত্মপ্রশংসায় বাড়াবাড়ি। এভাবে নিজের গুণগান গাওয়া কিভাবে বৈধ হতে পারে? তাছাড়া পরের শব্দগুলো আরো ভয়াবহ আর এ সব কথা বলে যিকির করা সূফীদের কাজ। আর বর্তমান যুগে তথাকথিত ইসলামী গানের শিল্পীরা এসব কথা বলে গান গায়। এটি সূফীবাদের নতুন ভার্সন ছাড়া অন্য কিছু নয়।মোটকথা এগুলো বিনা পূঁজিতে ব্যবসা করার জন্য পীরপূজারী ও কবরপূজারী সুফিদের আবিষ্কার। যারা হায়াতুন্নবীতে বিশ্বাসী অর্থাৎ যারা বিশ্বাস করে আল্লাহর নবী এখনো জীবিত আছেন, তিনি আমাদের সব কথা শুনেন, মানুষকে বিপদে সাহায্য করেন, মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন ইত্যাদি আকীদ্বা পোষণকারী ভন্ডরা এই গজল গুলো আমদানি করেছে। এছাড়া তাদের শিরকের ব্যবসাকে আরো জোরদার করার জন্য তথাকথিত পীর-ফকীর ও অলীরাও কবরে জীবিত আছে এবং মানুষের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে বলে জোরালো ভাবে প্রচার করে থাকে। এগুলো সব ধর্মের নামে ভণ্ডামি। রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]হাজির নাজির তিনি কবর থেকে সাড়া দেন মানুষের কোন উপকার করতে পারেন তিনি শুনছেন এরূপ ধারণা করা সুস্পষ্ট ভাবে শিরক।
আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃত ব্যক্তিকে’[সূরা নামল ২৭/৮০] আর ‘তুমি শুনাতে পারো না কোন কবরবাসীকে। [সূরা ফাত্বির ৩৫/২২]।
এছাড়া ‘যে ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবরে গিয়ে দরূদ পাঠ করবে, তিনি তার জন্য সাক্ষী হবেন ও সুপারিশকারী হবেন’, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর যেয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’, ‘আমি তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন সাক্ষী হব’ ইত্যাদি মর্মে যেসব হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সবগুলিই জাল বানোয়াট। [শায়খ আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭, ২০৩, ১০২১; ইরওয়াউল গালীল হা/১১২৭-২৮ প্রভৃতি]
কুরআন সুন্নার একাধিক বর্ননা থেকে আমরা যানতে পারি রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] সহ সকল নবী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের রূহ ‘আলমে বারযাখে’ জীবিত আছে। যা দুনিয়াবী জীবন থেকে পৃথক। যে জগত সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত কেউ অবগত নন। [আলবানী, ছহীহাহ হা/৬২১-এর আলোচনা]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নবীগণ তাদের কবরে জীবিত থেকে ছালাত আদায় করছেন’।[মুসনাদে বাযযার, হা/৬৮৮৮; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হা/৩৪২৫; বায়হাক্বী, হায়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ৩; সনদ সহীহ, সিলসিলা সহীহাহ, হা/৬২১]
অন্য হাদীছে বলেন, ‘মি‘রাজের রাত্রে আমি যখন লাল টিলার নিকট দিয়ে মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছিলেন’ (সহীহ মুসলিম, হা/২৩৭৫, ‘মর্যাদা’ অধ্যায়, ‘মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪২)। ‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ যমীনের উপর নবীগণের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন[আবূ দাঊদ, হা/১০৪৭ ও ১৫৩১; মিশকাত, হা/১৩৬১ ও ১৩৬৬]
মূলত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা গেছেন এটিই সঠিক আক্বীদা। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে বলেন,আপনিও মারা যাবেন এবং তারাও মারা যাবে। অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বাক-বিতণ্ডা করবে’।[সূরা আয-যুমার : ৩০-৩১]
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন,‘রাসূল (সাঃ) মৃত্যুর পরে যদিও জীবিত আছেন, তবুও সেটি পরকালীন জীবন। দুনিয়াবী জীবনের সাথে যা সামঞ্জস্যশীল নয়’। নবীগণ তাদের প্রভুর নিকটে জীবিত আছেন শহীদদের ন্যায়’। (ফাৎহুল বারী হা/৪০৪২-এর ব্যাখ্যা, ৭/৩৪৯ পৃ.)। অতএব বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বারযাখী জীবনের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে মানুষের হায়াত বা মঊত বলে কিছু নেই। তাই রূহ ফেরত দেওয়ার অর্থ তাঁকে অবহিত করানো এবং তিনি তা বুঝতে পারেন। আর সেটাই হ’ল তাঁর উত্তর দেওয়া।’[মির‘আত হা/৯৩১-এর ব্যাখ্যা ৪/২৬২-৭৪]
সুতরাং এ সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি বা মিথ্যাচার যুক্ত কথা থেকে সাবধান থাকতে হবে ইং-শা-আল্লাহ ।