Advertise with Anonymous Ads
ফাযায়েলে আমল বইয়ে বর্ণিত হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে বা ইসলামের নামে প্রচলিত মিথ্যা বর্ণনা বা গল্প বা কাহিনী ।
এই হাদীসটি ফাজায়েলে আমলের মধ্যে এভাবে পাওয়া যায়-
-রাসূল (ছঃ ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দেয় আর ইতিমধ্যে ঐ ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং ছালাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে এক হুকবা জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল, ৮০ বছর। আর প্রত্যেক বছর ৩৬০ তিন। আর প্রত্যেক দিন এক হাযার বছরের সমান, যেভাবে তোমরা গণনা কর। উল্লেখ্য, উক্ত হিসাব অনুযায়ী সর্বমোট দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর হয়। [ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬ ]
[বর্ণনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। উক্ত বক্তব্য তাবলীগ জামা‘আতের অনুসরণীয় গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল-এর ফাযায়েলে নামায অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে]
-এভাবেই ‘মাজালিসুল আবরারে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমার নিকটে হাদীছের যে সমস্ত গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে আমি এটা পাইনি। [ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬]
এখানে লেখক নিজেই যেহেতু স্বীকার করেছেন, সেহেতু আমরা নতুন কোন তাহক্বীক বা মন্তব্যের প্রয়োজন বোধ করছি না। তবে দুঃখজনক হল,বাংলা অনুবাদে তার এই স্বীকারক্তিটুকু উল্লেখ করা হয় নাই। এবং হাদীসের কিতাবে এটা না থাকার পরও কেন তা রাসূল (ছঃ) এর নামে বর্ণনা করতে হবে? এটা নিঃসন্দেহে তাঁর নামে মিথ্যাচারের শামিল।
আসুন এখন সহিহ হাদিসের আলোকে একটু যাচাই করে দেখি ।
ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকেও কথাটি সঠিক নয়। কারণ রাসূল ﷺ বলেন, ঘুম বা ভুলের কারণে যে ব্যক্তির ছালাত ছুটে যাবে, তার কাফ্ফারা হল যখন স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেয়া।[ছহীহ বুখারী হা/৫৯৭, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৭০, ২/৩৫ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ভুল করে’ অনুচ্ছেদ-৩৭; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮, (ইফাবা হা/১৪৩১ ও ১৪৩৬), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬০৩, পৃঃ ৬১ এবং হা/৬৮৪, পৃঃ ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩, ২/২০৮ পৃঃ।
.
এছাড়া রাসূল ﷺ এবং ছাহাবায়ে কেরাম খন্দকের যুদ্ধের দিন সূর্য ডুবার পর আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন। [ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯, ২/৩৫ পৃঃ), ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৬২, ১/২২৭, (ইফাবা হা/১৩০৩), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭]
.
তাছাড়া ফজর ছালাতও একদিন তাঁরা সূর্যের তাপ বাড়ার পরে পড়েছেন। [ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১/২৩৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৩১), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬৮৪, পৃঃ ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩, ২/২০৮ পৃঃ]
.
আমরা জানলাম যে, রাসুল ও তাঁর সাহাবাগণও কয়েকবার কাযা সালাত পড়েছেন। তাহলে বলুন রাসুল ﷺ ও তার সাহাবাগণও কি দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছরের জন্য জাহান্নামে যাবেন? [নাঊযুবিল্লাহ…]। তাই এসকল মিথ্যা বর্ণনা থেকে সাবধান থাকুন ।
পরিশেষে বলতে চাই , বিনা কারণে সালত ত্যাগ এর ভয়াবহ শাস্তি / পরিণতি এর কথা অনেক সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে । সুতরাং কাউকে সালত আদায়ে উৎসাহী করার জন্য আমরা সেগুলো প্রচার করবো ।রাসূল (ছঃ ) এর নামে কোন মিথ্যা কথা দিয়ে কাউকে উৎসাহী করার কোন দরকার নাই ।