Advertise with Anonymous Ads
হিন্দু ধর্মে প্রতিমা বা মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ , ব্যাখ্যা এবং দলিল বা রেফারেন্স সহ বিস্তারিত
১) ঈশ্বর মাত্র একজন; দ্বিতীয় কেউ নেই।
ছান্দগ্য উপনিষদের: অধ্যায় ০৬ অনুঃ ২ পরিঃ ০১।
২) সবশক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই। তার কোন প্রভু নেই। তার চেয়ে বড় কেউ নেই।
শ্বেতাসত্র উপনিষদের: অধ্যায় ০৬ অনুঃ ০৯।
৩) তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে; যারা প্রাকৃতিক বন্তুর পূঁজা করে। যেমনঃ আগুন, গাছ, সাপ ইত্যাদি।
যযুবেদ অধ্যায় ৪০ অনুঃ ০9
৪) সবশক্তিমান ঈশ্বরের মত কেউ নেই ( তার কোন প্রতিমূর্তি নেই, প্রতিমা নেই, রুপক নেই, ভাস্কর্য নেই)।
শ্বেতাসত্র উপনিষদের: অধ্যায় ০৪ অনুঃ ১৯।
৫) সবশক্তিমান ঈশ্বরকে কেউ দেখতে পাই না।
শ্বেতাসত্র উপনিষদের: অধ্যায় ০৪ অনুঃ ১০ পরিঃ ২০।
৬) যাদের বিচার বুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে জাগতিক আকাঙ্খা তারাই অপদেবতার পূজা করে।
ভগবত গীতা : অধ্যায় ০৭ অনুঃ ২০।
৭) লোকে জানে আমি কখনও জন্মাইনি ও উদ্ভূত হয়নি; আমি এই বিশ্বজগতের সবময় প্রভু
ভগবত গীতা : অধ্যায় ১০ অনুঃ ০৩।
৮) সবশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই।
যযুবেদ অধ্যায়ঃ ৩২ অনুঃ ০৩
৯) তারা আরো বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত আছে; যারা মানুষের তৈরী বস্তুর পূঁজা করে। যেমন- মাটির পতুল, ভাস্কর্য ইত্যাদি।
যযুবেদ অধ্যায় ৪০ অনুঃ ০9
১০) সৃষ্টিকর্তা সুমহান
গ্রন্থঃ ২০ খন্ডঃ ৫৮ মন্ত্রঃ ৩।
১১) সত্য একটাই; ঈশ্বর একজনই, জ্ঞানীরা ইশ্বরকে ডেকে থাকেন অনেক নামে।
ঋগবেদের গ্রন্থঃ ০১ অনুঃ ৬৪ পরিঃ ৪৬।
১২) সবশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র।
যযুবেদ অধ্যায় ৪০ অনুঃ ০৮।
১৩) ঈশ্বর বাদে আর কারো উপাসনা কর না; শুধুমাত্র তার উপসনা কর যিনি সুমহান ঈশ্বর।
ঋগবেদ গ্রন্থঃ ০৮ খন্ডঃ ০১ মন্ত্রঃ ০১।
আর ব্রক্ষাসূত্র বলেঃ ঈশ্বর মাত্র একজনই; দ্বিতীয় কউ নেই। কেউ নেই, কেউ নেই আর কেউ কখনও ছিলোও না।
—————————————————–
যজুর্বেদ ৩২/৩, মহর্ষির ভাষ্য সহিত
ন তস্য প্রতিমা অস্তি য়স্য নাম মহদ্ য়শঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা য়স্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।
অনুবাদ: যাঁর মহান প্রসিদ্ধ যশ রয়েছে সেই পরমাত্মার কোনো প্রতিমা নেই। “হিরণ্যগর্ভ” আদি মন্ত্রে, “মা মা হিংসীত্” এই মন্ত্রে ও “য়স্মান্ন জাত” এই মন্ত্রে সেই পরমাত্মার বর্ণন রয়েছে।
মহর্ষির ভাষ্য “ন নিষেধে তস্য পরমেশ্বরস্য প্রতিমা প্রতিমীয়তে য়য়া তৎপরিমাপকং সদৃশং তোলনসাধকং প্রকৃতিরাকৃতিরবা অস্তি বর্ততে” অর্থাৎ সেই পরমেশ্বরের তুল্য পরিমাণ সদৃশ সাধক প্রতিকৃতি বা মূর্তি কিছুই নেই।
সম্প্রদায়বাদী সেই গোঁড়াদের দাবি এই মন্ত্রে প্রতিমা শব্দ দ্বারা নাকি মূর্তিকে বোঝায় নি, কেবল উপমা বা তুলনা অর্থে বুঝিয়েছে। তাদের দাবি পুরাতন ভাষ্যকাররা নাকি এমন কোনো অর্থ করে যাননি, মহর্ষি দয়ানন্দই কেবল এই অর্থ করেছেন।
বেশ দেখুন তাদের আদরণীয় উবট ও মহিধর কি ভাষ্য করেছে,
যজুর্বেদ ৩২/৩, উবট ও মহিধর ভাষ্য সহিত
“ন তস্য পুরুষস্য প্রতিমা প্রতিমানভূতং কিঞ্চিদ্বিদ্যতে”(উবট)
এবং
“তস্য পুরুষস্য প্রতিমা প্রতিমানমুপমানং কিঞ্চিদ্বস্তু নাস্তি”(মহিধর)
অর্থাৎ সেই পুরুষের প্রতিমা, তুলনা বা উপমা কিছুই নেই।
উভয়েই বলছেন প্রতিমা নেই।
এই মন্ত্র দ্বারা যেমন প্রমাণ হয় ঈশ্বরের তুল্য কিছু নেই, তেমনি তাঁর প্রতিমা বা মূর্তি নেই। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি হয় তা মানতে নারাজ পণ্ডিতম্মন্যরা। মূর্তি শব্দ অবৈদিক দেখে বেদে মূর্তি শব্দ নেই, সে স্থলে আছে প্রতিমা। প্রতিমা অর্থ যে মূর্তি তা বৈদিক কোষেও উল্লেখিত আছে।
দেখা যায় প্রতিমা=উপমা দেখাতে তারা সাধারণ বাংলা অভিধান ইউজ করে৷ অথচ একটি বিখ্যাত প্রাচীন অভিধান অমরকোষ এ প্রতিমার ৮ প্রতিশব্দ আছে যা মূর্তি নির্দেশ করে৷ অমরকোষ ২.১০.৩৫
প্রতিমানং প্রতিবিম্বং প্রতিমা প্রতিয়াতনা প্রতিচ্ছায়া।
প্রতিকৃতিরর্চা পুংসি প্রতিনিধিরুপমোপমানং স্যাত্।।
চলুন বৈদিক ঈশ্বরের সাকার নিরাকার কি আকার সে নিয়ে বেদ উপনিষদ কি বলে তা দেখে নিই:
যজুর্বেদ ৪০/৮ বলছে ঈশ্বর অকায়ম(সর্বপ্রকার শরীররহিত)
আচার্য শঙ্করের ভাষ্য দেখুন, তিনিও বলছেন সেই আত্মা(পরমাত্মা) স্থুল, সূক্ষ্ম শরীর বিবর্জিত
ঈশ উপনিষদ ৮, শঙ্কর ভাষ্য
এবার তাহলে প্রশ্ন রইল, যার কোনো শরীরই নেই তাঁর মূর্তি বা প্রতিমা আপনারা কিভাবে তৈরি করবেন?
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদও বলছে, “তাঁর কোনও প্রতিরূপ বা প্রতিমা নেই”(৪/১৯) এবং “সনাতনের কোন রূপ নেই যা চক্ষুর গোচর হয়, দৃষ্টির দ্বারাও তাঁকে কেও দেখে না”(৪/২০)
কঠ উপনিষদেও ১/২/২২ এ বলা হচ্ছে ব্রহ্ম প্রাণীগণের শরীরে থেকেও শরীর রহিত
কঠ উপনিষদের ১/৩/১৫ তে আরও বলা হয়েছে, পরমাত্মা অরূপম বা রূপহীন, কেবল সেই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারলেই মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১০-এও একই কথা বলা হয়েছে।
একই কথা বলছে তৈত্তিরীয় উপনিষদের ব্রহ্মানন্দবল্লীর সপ্তম অনুবাক
মুণ্ডক উপনিষদ ২/১/২ তো বলেই দিচ্ছে, সেই দিব্য পুরুষ অমূর্ত বা মূর্তিহীন
সেই পরমেশ্বরের মূর্তি তো দূরে থাক,
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/৯ বলছে সেই ঈশ্বরের কোনও চিহ্নবিশেষও নেই
১. না তাস্তে প্রাতীমা আস্থি ( যজুর্বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ )
অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতি মূর্তি নেই ।
“যাদের মন ঝড় কামনা বাসনার ধারা বিক্ষিপ্ত/বিকৃত তারা অন্য দেব দেবীর স্মরনাগত হয় এবং তাদের সেই স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।” (গীতার সপ্তম অধ্যের ২০ নাম্বার শ্লোক)
হিন্দু ধর্মে পূজা নিষিদ্ধ :-
রেফারেন্স সহ প্রমান দিলাম :-
১. না তাস্তে প্রাতীমা আস্থি ( যজুর্বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ )
অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রতি মূর্তি নেই ।
২. যারা নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়েছে তাঁরাই মূর্তি পূজা করে ( ভগবৎ গীতা অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০ নম্বর ) ।
রেফারেন্স সহ দিলাম ।
৩. হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে হিন্দুদের কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥
বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তার মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই । আরও আছে “সে একজন তারই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)।
“একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩) ।
“এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩) ।
৪. হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা করতে নিষেধ করা হয়েছে॥
ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ – [ যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে। ]
৫. ভগবত গীতা – অধ্যায় ১০ – স্তব ৩ –
[ তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক ,তারা উপদেবতার উপাসনা করে ,তাই তারা সত্যিকার স্রস্টার উপাসনা করে না।]
৬. যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –
[ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন – চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]