মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুন্‌জী বইয়ে বর্ণিত হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে বা ইসলামের নামে প্রচলিত মিথ্যা বর্ণনা বা গল্প বা কাহিনী

0

Advertise with Anonymous Ads

মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুন্‌জী বইয়ে বর্ণিত হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে বা ইসলামের নামে প্রচলিত মিথ্যা বর্ণনা বা গল্প বা কাহিনী

লেখকের ভূমিকা পড়তে গিয়েই আমার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা হল। তিনি বলছিলেন, “পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, সকল মুসলিম নর-নারীর জন্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ফরয।” অথচ একটা ছোট ছেলেও বলতে পারে যে এটা কুরআনের কোন আয়াত নয় বরং হাদিসের অংশ। তারমধ্যে আবার ‘নারী’ শব্দটা মুনকার। হাদীসে শুধু নরের উল্লেখ আছে। যদিও উভয় শ্রেণিই উদ্দেশ্য।
এছাড়াও বইয়ের ভূমিকাতে তিনি অপ্রমাণিত আরো একটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। সেটা হল, মাখলুকাতের সংখ্যা আঠার হাজার। অথচ কোন সহিহ হাদিস দিয়ে প্রমাণিত নয় যে মাখলুকাতের সংখ্যা আঠার হাজার ।
২২ পৃষ্ঠাতে লেখক একটা জালকথা/মিথ্যা বলে দিলেন। সেটা হল, “আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকে নবী সা.কে সৃষ্টি করেছেন”। জালহাদিস বিষয়ক প্রায় সব গ্রন্থেই একে জাল বলা হয়েছে। দুই পৃষ্ঠা আগ বেড়ে তিনি আরো বলেছেন, মানুষের রুহ মৃত্যুর পর মাঝেমাঝে পৃথিবীতে বিচরণ করে এবং তাদের স্বজনদের কার্যকলাপ দেখে। এগুলো সবই বানোয়াট কথা ।
মুসলিম সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সর্বপ্রথম তাদের কানে আযান শোনানোর কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু লেখক ২৯পৃষ্ঠায় বলেছেন, “মুসলমানদের কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সর্বপ্রথম তার কানে কালেমা তাইয়েবার আওয়াজ শুনানো হয়।”
৩২ পৃষ্ঠায় লেখক বলেছেন, “হাদীস শরীফে ১ লক্ষ ২৪ হাজার বা ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসুলের উল্লেখ আছে।” অথচ বাস্তবতা হল, ২ লক্ষের কথা কোন বর্ণনাই পাওয়া যায় না। আর ১ লক্ষের বিষয়ে মুসনাদে আহমাদে একটি বর্ণনা পাওয়া গেলেও সেটি সনদগতভাবে দুর্বল। প্রকৃতপক্ষে নবি-রাসুলদের সঠিক সংখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন।
৩৬ পৃষ্ঠায় তিনি একটি জালহাদিস উল্লেখ করেছেন। সেটি হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জন্মভূমির উপর মোহাব্বত রাখা ঈমানের আলামত।” যদিও মূল আরবীতে আলামত না বলে একে অঙ্গ বলা হয়েছে। তবে এটি জাল হাওয়াটা সুপ্রসিদ্ধ। এর জন্য আলমাকাসিদুল হাসানাহ-২১৮, তাযকিরাতুল মওযুআত-১১ দেখা যেতে পারে।
এরকম আরো কিছু প্রসিদ্ধ-অপ্রসিদ্ধ হাদিস তিনি তার বইয়ে সন্নিবেশিত করেছেন। যার সবগুলো তুলে ধরলে লেখাটা অতিরিক্ত লম্বা হয়ে যেতে পারে।
বিশেষকরে ফজিলত বর্ণনায় লেখক এমনসব আজগুবি বিষয়ও উল্লেখ করেছেন যা মনগড়া হওয়ার বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
বিশেষকরে শবেকদর আর শবে বরাতের জন্য আলাদ পদ্ধতির সালাতের কথা বলেছেন। যেমন প্রতি রাকাতে দশবার করে সুরা ইখলাস পড়া ইত্যাদি। এগুলো সবই বানোয়াট বিষয়। কদর বা বরাতের রাতের জন্য আলাদা ধরনের কোন সালাতের উল্লেখ হাদীসে পাওয়া যায় না। বরং সাধারণ নিয়মে নফল যেভাবে পড়তে হয় সেভাবেই পড়তে হবে।
এই বইটির সবচে বড় গোমরাহির অন্যতম হল ১৫২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত একশত ত্রিশ ফরযের শিরোনামে চার মাযহাবকে চার ফরজ বলা। মাযহাব হল মূলত ইসলামী আইন শাস্ত্রের ধারা। যা সাধারণ মানুষদের জন্য ইবাদাত-বন্দেগির পথ ও পদ্ধতিকে সুগম করে। এটি প্রশংসনীয় হতে পারে। তাই বলে একে ফরজ বলে দেওয়া চরম গোমরাহি। মূলত এই বইটার কারণেই আমাদের সমাজে লোকমুখে এই কথাটা ছড়িয়েছে। যেটা কখনোই মাযহাবকে সমর্থনকারী আলেমরাও গ্রহণ করেন নি। উল্টো এর প্রতিবাদ করেছেন। কারণ ফরজ সাব্যস্ত হবার জন্য যেসব উপাদান থাকতে হয় তার কোনটাই এখানে নাই। মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কোন গ্রন্থেই মাযহাব মানাকে ফরজ বলা হয় নি।
‘পরশমনি দোআ’ নামে লেখক অনেকগুলো বানোয়াট-জাল দোআ বর্ণনা করেছেন বইয়ের শেষে। তো সেখানে একটা দোআ আছে সেটা নাকি জিবরাইল আ: রাসুলকে শিক্ষা দিয়েছেন। এই দোআর ফজিলত বলতে গিয়ে লেখক বলেন,
এক সাহাবি মাছ রান্না করতে গিয়ে দেখেন মাছ সিদ্ধ হচ্ছে না। তিনি রাসুল সা. কে সেটা জানালে তিনি আল্লাহর কাছে দোআ করলেন। তখন মাছ কথা বলতে শুরু করলো যে, জনৈক ব্যক্তি যখন নদীর তীরে বসে এই দোআ পড়ছিল তখন মাছ সেই দোআ মুখস্ত করে নেয়। ফলে সে আর সিদ্ধ হচ্ছে না। এরদ্বারা বুঝে আসে, এই দোআ পাঠ করলে দোযখের আগুন নিষ্কৃয় হয়ে যায়। দোআটি পড়তে গিয়েই হাসির কাণ্ড ঘটছিল। কারণ, দোআর মধ্যে শাহ মুহিউদ্দিন বিন অমুক বিন তমুক বলে লম্বা বংশধারা বর্ণনা করা হয়েছে। যার শেষ প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে হুসাইন রা, হয়ে আলী রা, পর্যন্ত। স্পষ্টই বুঝে আসে এটা শিয়াদের তৈরি জাল বর্ণনা। কারণ, শাহ শব্দটা আরবি নয়। এটি ইরানের ভাষা ফার্সির শব্দ। আরবরা নামের শুরুতে শাহ ব্যবহার করে না। তাছাড়া যে বংশধারার উল্লেখ রয়েছে দোআটিতে রাসুলের যুগে তো তারা কেউ-ই ছিলেন না। মোটকথা এটা যে বানোয়াট সেটা বুঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানী হতে হয় না।
[এমন মিথ্যা মনগড়া গল্প কাহিনী বা বর্ণনা দিয়ে ভরা মোকছুদুল মোমেনীন বেহেস্তের কুন্‌জী বই পড়া থেকে সাবধান থাকুন ]

বিঃদ্রঃ যদি কেউ দাবি করেন বা সন্দেহ পোষণ করেন যে উপরে প্রদত্ত বক্তব্য গুলোর মধ্যে ভুল আছে বা যে কোন টা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে বা আরো বিস্তারিত জানা দরকার তাহলে কমেন্ট বক্সে বিস্তারিত জানান । 



Advertise with Anonymous Ads

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

Blog Archive

Search This Blog

LATEST IN TECH

Technology/feat-big

Facebook SDK

  • https://connect.facebook.net/en_US/sdk.js#xfbml=1&version=v9.0

Text

About Me

My Photo
RIR DEVELOPER COMPANY
View my complete profile

Main Tags

Followers

Categories

Categories

Subscribe Us

Pages