Advertise with Anonymous Ads
চাঁদ বা তারা কী ইসলামের প্রতীক বা চিহ্ন বা সিম্বল , বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ
পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম দেশেই চাঁদ বা তারাকে ইসলামের একটি প্রতীক বা সিম্বল বা চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মসজিদ, মসজিদের গম্বুজ, মিনার, কবর, মাজার, ধর্মীয় বই-পুস্তক, জায়নামাজ, বিশেষ করে পতাকায় চাঁদ-তারার বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পৃথিবীর বেশ কিছু মুসলিম দেশের পতাকায় চাঁদ বা তারা বা শুধু চাঁদ অথবা শুধু তারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু কেন? চাঁদ-তারা কি ইসলামের কোনো প্রতীক? কুরআন-হাদিসে কি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা রয়েছে?
বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ পর্যালোচনা :
বস্তুত চাঁদ বা তারা ইসলামের কোনো প্রতীক নয়। কেননা রাসুল সা. খোলাফায়ে রাশেদিন, তাবেয়িন এবং তৎপরবর্তী কোনো আলেমের কাছ থেকে চাঁদ বা তারা ইসলামের নিদর্শন – এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
এমনকি উমাইয়া বা আব্বাসীয় খেলাফতকালীনও তাদের রাষ্ট্রীয় বা সামরিক পতাকায় চাঁদ বা তারার ব্যবহার লক্ষ করা যায়নি ।
ইসলামে চাঁদ বা তারার উদ্ভব ঘটে উসমানি খেলাফতকালীন সময়ে। উসমানি খেলাফতের সমরনায়কগণ এ সময় বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ জয় করেন। ইউরোপীয়রা তাদের পতাকায় চাঁদ-তারা ব্যবহার করতো সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে।
১৪৫৩ ঈসায়ি সনে উসমানিরা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুর্ভেদ্য রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় করে। এই জয়ের স্মারক হিসেবে তারা এই রাজ্যর রাষ্ট্রীয় পতাকা ও প্রতীক নিজেদের জন্য ব্যবহার শুরু করে। এর আগে যেহেতু ইসলামের নির্দিষ্ট কোনো পতাকা বা সিম্বল ছিলো না, তাই সমগ্র উসমানি খেলাফতে এই প্রতীকের ব্যবহার শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
চাঁদ বা তারা ইসলামের প্রতীক হিসেবে নয় বরং উসমানি সাম্রাজ্যের রাজকীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। কোনো আলেম মতামত দিয়েছেন, আরবি চান্দ্রমাস যেহেতু নতুন চাঁদ দেখে শুরু হয়, সে হিসেবে এই চাঁদ-তারা মুসলমানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃতহতে পারে। তকে এটাকে কোনোভাবেই ইসলামের নিজস্ব প্রতীক বলাটা ভুল হবে।
আল্লাহ বলেছেন
وَمِنْ ءَايٰتِهِ الَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِى خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
রাত, দিন, সূর্য ও চনদ্র তাঁরই এক একটি নিদর্শন। তোমরা সূর্য কিংবা চনদ্রকে সেজদা করো না। সেজদা করবে আল্লাহকেই, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবল তাঁরই এবাদতকারী হও। (সূরা হামিম সাজদা ৪১:৩৭)
আল কুরআনে চন্দ্রকে মাস গণনার প্রতীক বলা হয়েছে—
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে।
বল, ‘তা মানুষের ও হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক’। আর ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করবে। কিন্তু ভাল কাজ হল, যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা গৃহসমূহে তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। [সুরা বাকারা, আয়াত ২:১৮৯]
আরো ইরশাদ হয়েছে,
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। [সুরা ইউনুস, ১০: ৫]
তারকা নিয়ে বলা হয়েছে—
وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَہۡتَدُواْ بِہَا فِى ظُلُمَـٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأَيَـٰتِ لِقَوۡمٍ۬ يَعۡلَمُونَ
আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। নিশ্চয় আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে। [সুরা আনআম,৬: ৯৭]