Advertise with Anonymous Ads
কুরআন ও বাইবেল থেকে , এক ঈশ্বরের প্রমাণ ও যীশু বা ঈসা (আ) এর ঈশ্বরত্ব বা ঈশ্বরের পুত্র বা ত্রিত্ববাদ বিষয়ক খ্রিস্টানদের মিথ্যাচার বা ভুল ভ্রান্তি বা তাদের দাবি খন্ডন
প্রথমে আসুন খ্রিস্টান ভাইদের ” যীশু বা ঈসা (আ) এর ঈশ্বরত্ব বা ঈশ্বরের পুত্র বা ত্রিত্ববাদ “ দাবির পক্ষে উপস্থাপিত কিছু রেফারেন্স খন্ডন করি এবং অবশ্যই আমরা এগুলো খন্ডন করবো তাদের পবিত্র বাইবেল থেকে । এবং এর সাথে কুরআন থেকে রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করবো ইং-শা-আল্লাহ ।
1) তাদের দাবি : যীশু সৃষ্টিকর্তা (যোহন ১:১-৩, কল ১:১৬ )
আমাদের জবাব : উনি যে রেফারেন্স দিলো আসুন সেখানে কি বলা আমরা দেখে নেই,,,
(যোহন ১:১-৪)
“আদিতে বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন আর সেই বাক্যই ঈশ্বর ছিলেন৷”[ যোহন ১:১]
1:2 সেই বাক্য আদিতে ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন৷
1:3 তাঁর মাধ্যমেই সব কিছুর সৃষ্টি হয়েছিল এবং এর মধ্যে তাঁকে ছাড়া কোন কিছুরই সৃষ্টি হয় নি৷
1:4 তাঁর মধ্যে জীবন ছিল; আর সেই জীবন জগতের মানুষের কাছে আলো নিয়ে এল৷
◾জবাব:- এখানে তো যীশু শব্দটাই নাই বরং এটা হলো যিহোবার বৈশিষ্ট্য। আর আমি যদি বলি :-“আমার সাথে তেলাপোকা ছিলো।” তাহলে কি আমি তেলাপোকা হয়ে যাই? অযৌক্তিক একটি ভার্স।
(নোট:খ্রিস্টান মিশনারিরা বলে পবিত্র “বাক্য”-দ্বারা যীশুর জন্ম হয়েছিল।সুতরাং বাক্য হলো যীশু। আর যোহনের ১:১ এ বলা হয়েছে :-“আদিতে বাক্য ছিল”।আর যীশু কে যেহেতু “বাক্য”-বলা হয়েছে তাই যীশু হলো ঈশ্বর।কারণ বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন অর্থাৎ যীশুই হলো ঈশ্বর (নাঊযুবিল্লাহ)।এখানে (যোহন ১:১-২)-পদে “বাক্যের”- স্থলে “ঈশ্বর “-শব্দ টাই নিয়ে দেখি।কেননা খ্রিস্টানদের দাবি হলো বাক্য হলো ঈশ্বর। আবার ঈশ্বর ই বাক্য অর্থাৎ যেই বাক্য সেই ঈশ্বর।ঠিক এরুপ:যেই লাউ,সেই কদু।এখন ভালো করে লক্ষ্য করুন এটা কেমন হয় উদ্ধৃতি টা?
“আদিতে ঈশ্বর ছিলেন,ঈশ্বর ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন,আর সেই ঈশ্বরই ঈশ্বর ছিলেন।সেই ঈশ্বর আদিতে ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন। “
এখানে আদিতে ঈশ্বর আবার কোন ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন ?তথাকথিত খ্রিস্টানদের ঈশ্বর কতজন?এছাড়া উপরোল্লিখিত ভার্সের কোন অর্থই হয় না অর্থাৎ অযৌকক্তিক একটা তথ্য।এছাড়া এই উদ্ধৃতি কখনোই যীশুর নয় বরং এটি হলো যোহনের ব্যক্তিগত একটা অযৌকক্তিক কথা। )
[ কল ১:১৬ ]
1:16 তাঁর পরাক্রমে সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে৷ স্বর্গে ও মর্তে, দৃশ্য ও অদৃশ্য যা কিছু আছে, সমস্ত আত্মিক শক্তি, প্রভুবৃন্দ, শাসনকারী কর্তৃত্ত্ব, সকলই তাঁর দ্বারা ও তাঁর নিমিত্ত সৃষ্ট হয়েছে৷
◾জবাব:- এখানে কোথাও যীশুকে ঈশ্বর বলা হয় নি। আর [ কল ১:১৬ ] তে বলা হয়েছে :-“ঈশ্বরকে কেউ দেখে নি” কিন্তু যীশুকে দেখেছে।
2) তাদের দাবি : যীশু পাপের ক্ষমাকারী। [ মার্ক ২:৫ ]
আমাদের জবাব : 2:5 তাদের বিশ্বাস দেখে যীশু সেই পঙ্গু লোকটিকে বললেন, ‘বাছা, তোমার সব পাপের ক্ষমা হল৷’
(নোট:যদি এই উদ্ধৃতির আগে এবং পরের অনুচ্ছেদগুলো পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন আসলে যীশু এটা রুপক অর্থে বলেছিলেন আধ্যাত্মিক ব্যধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে)
◾জবাব:- নবী হিসেবে অনেকের নানান শক্তি ছিলো যেমন নবী মূসা লাঠিকে সাপে পরিণত করতে পারতেন এর মানে এই নয় মূসা (আ:) ঈশ্বর। যীশু বলেছেন সব পাপের ক্ষমা হলো কিন্তু আমারা জানি সবার বিচার বিচারের দিনে।
“তখন বহু মানুষ একত্রিত হবে| তাদের মধ্যে কেউ আছে ভূগর্ভস্থ কয়েদে বদ্ধ| কেউ আছে কারাগারে| কিন্তু অবশেষে, অনেক দিন পরে তাদের সকলের বিচার হবে|”[ ইসাইয়া ২৪:২২ ]
আর যীশু নিজেই পাপী যীশু পাপের জন্য মারা গেছেন। [ যেরেমিয়া ৩১:৩০/মথি ২৭:৫০ ]
(বিস্তারিত:)খ্রিস্টানদের দাবি:-“যীশু খ্রিস্ট পাপ ক্ষমা করতে পারতেন যেখানে যীশু বলেছেন:-“তোমার পাপ ক্ষমা করা হলো।”(মার্ক ২:৫; লুক ৫:২০)
আর খ্রিস্টানরা এইসব আয়াত দেখিয়ে বলে ,যীশু পাপ ক্ষমা করতে পারতেন কারণ তিনি ঈশ্বর। আর ঈশ্বর ই পারে একমাত্র পাপ ক্ষমা করতে।আর আপনারা যদি বাইবেলের এসব আয়াত পড়েন তাহলে এমন কখনোই পাবেন না যেখানে যীশু বলেছেন:-“আমি তোমার/তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিলাম।”বরং বলা হয়েছে:”তোমার পাপ ক্ষমা করা হলো।”-আর এটাকে বলে খবর অর্থাৎ কেউ একজন তার পাপ ক্ষমা করেছেন যা যীশু খ্রিস্ট ঐ ব্যক্তি কে জানিয়ে দিয়েছেন ?আর পাপ ক্ষমা করেছেন ঈশ্বর। আর ঈশ্বর যে পাপ ক্ষমা করেছেন এই বার্তা যীশু খ্রিস্ট ঐ ব্যক্তি কে জানিয়ে দিয়েছেন যে,”তার পাপ ক্ষমা করা হলো।আর এটা থেকেই প্রমাণিত যে ,যীশু খ্রিস্ট পাপ ক্ষমা করেছেন এমনটা নয় বরং তার (ঐ ব্যক্তির) পাপ ক্ষমা করা হলো “-এই বার্তাটি যীশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের কাছে থেকে পাওয়ার পরে তাকে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ বলেছেন। আর আপনারা যদি বাইবেল পড়েন তাহলে দেখবেন যে ,যীশু বলেছেন আমি নিজের থেকে কিছুই করতে পারি না অর্থাৎ তিনি যা করেন ঈশ্বরের সাহায্যে করেন।”(যোহন ৫:৩০; ১৪:২৮; ১০:২৯; মথি ১২:২৮; লুক ১১:২০)।
আর আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি সকল নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর সাহায্যে কাজ করত।তারা কখনোই নিজ থেকে কথা বলতেন না,কাজ করতেন না।”(পবিত্র কোরআন,সূরা নাজম,আয়াত ৩-৪)
এছাড়া বাইবেলেও একজন সত্যের আত্মার (মুহাম্মদ সাঃ)এর কথা বলা হয়েছে,যে নিজে থেকে কোন কথা বলবেন না বরং ঈশ্বর যা বলেন তাই শুনে বলবেন।”(দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৮-১৯)
তাহলে বোঝা যায় যে যীশু খ্রিস্ট নিজে পাপ ক্ষমা করেছেন এমনটা নয় বরং তার পাপ ক্ষমা করা হলো।আর যীশু খ্রিস্ট নিজ থেকেই পাপ ক্ষমা করতেন “-একথা বাইবেলের মধ্যে নেই।তবুও ধরে নিলাম যদি পাপ ক্ষমা করার কারণে যীশু ঈশ্বর হয় তাহলে আমরা বলব যে যীশুর শিষ্যরাও ছিলেন ঈশ্বর। কেননা তারাও পাপ ক্ষমা করতে পারতেন। “(যোহন ২০:২৩)।এখন খ্রিস্টান মিশনারিদের কাছে প্রশ্ন যদি পাপ ক্ষমা করলে সে যদি ঈশ্বর হয়ে যায়,তাহলে যীশুর ১২ জন শিষ্যেরাও কী ঈশ্বর নাকি কারণ তারাও পাপ ক্ষমা করতে পারতেন।তাহলে তো পাপ ক্ষমা করার থিওরি অনুযায়ী যীশু সহ ১২ জন অর্থাৎ মোট ১৩ জনকেই ঈশ্বর বলে মানতে হবে।)
আবার দেখুন:বাইবেলের মধ্যে (মার্ক ২:১০)-এ বলা হয়েছে:-“কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা যে মানবপুত্রের আছে এটা আমি তোমাদের প্রমাণ করে দেব৷ “এখানে বলা হয়েছে মানবপুত্র যীশু খ্রিস্টের পাপ ক্ষমা করার এখতিয়ার আছে তাও পৃথিবীতে কিন্তু কিয়ামত দিবসে নয়।এছাড়াও যীশু “(যোহন ২০:২৩)-এ যীশু তাঁর শিষ্যদেরও পাপ ক্ষমা করার এখতিয়ার দিয়েছেন।এখন পাপ ক্ষমা করার মানে যদি তিনি ঈশ্বর হন তাহলে বলতে হবে যীশুর ১২ জন শিষ্যেরাও ঈশ্বর।
এছাড়া বাইবেলে আছে কিভাবে দোআ করতে হবে তা যীশু খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের শেখাচ্ছেন।আমাদের পাপ ক্ষমা কর, কারণ আমাদের বিরুদ্ধে যাঁরা অন্যায় করেছে, আমরাও তাদের ক্ষমা করেছি, আর আমাদের পরীক্ষায় পড়তে দিও না৷”(লুক ১১:১-৪)।আর বাইবেলের ভাষায় পাপ বলতে অপরাধ কে বোঝানো হয় যে ,মানুষ অপরাধ করলে মানুষ তা ক্ষমা করতে পারে।আর পাপ ক্ষমা করার অর্থ যদি ঈশ্বর হয়ে যায় তাহলে আরো প্রমাণ দেখাতে পারব যে মুসা আঃ ও একজন ঈশ্বর। কারণ তিনি ফেরাউনের পাপ ক্ষমা করেছিল অর্থাৎ ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “আমি তোমাদের ও তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে পাপ করেছি।এবারকার মতো আমার অপরাধ ক্ষমা করে দাও (যাত্রাপুস্তক ১০:১৭)।
একইভাবে কোরবানির মাধ্যমেও মানুষের পাপ ক্ষমা করা হয়।যেই পশুকে কোরবানি করার মাধ্যমে পাপ ক্ষমা করা হয় সেই পশুকে কী খ্রিস্টানরা ঈশ্বর মানবে?আর কোরবানির মাধ্যমেও মানুষের পাপ ক্ষমা করা হয় (লেবীয় পুস্তক ৪:২০,২৬)
“খ্রিস্টানদের একজন নবীর নাম হচ্ছে শ্যামুয়েল (হযরত শামাউন আঃ),তিনিও পাপ ক্ষমা করেছেন। “(১ শ্যামুয়েল ১৫:২৫)
মুসা আঃ ও তাঁর অনুসারীদের পাপ ক্ষমা করেছেন।আর পাপ ক্ষমা করার বিষয়টি একাধিক জায়গায় আছে।আর পাপ ক্ষমা করতে পারলেই যে ঈশ্বর হয়ে যাবে এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা।
3) তাদের দাবি : যীশুকে দেখাই ঈশ্বরকে দেখা। [ যোহন ১৪:৯ ]
আমাদের জবাব : আসুন দেখি রেফারেন্স অনুযায়ী উদ্ধৃতিতে কী বলা হয়েছে?
14:9 যীশু তাঁকে বললেন,যে আমাকে দেখিয়াছে সে পিতাকে দেখিয়াছে।তুমি কেমন করে বলিতেছ,পিতাকে আমাদের দেখান?”
14:10 তুমি কি বিশ্বাস কর না যে আমি পিতার মধ্যে আছি আর পিতাও আমার মধ্যে আছেন? আমি তোমাদের যে সকল কথা বলি তা নিজের থেকে বলি না৷ আমার মধ্যে যিনি আছেন সেই পিতা তাঁর নিজের কাজ করেন৷”(যোহন ১৪:৯-১০)
জবাব:- ত্রিত্ববাদী পৌলীয় খ্রিস্টানগণ দাবি করেন যে,এটাই তাঁর ঈশ্বরের প্রমাণ। কারণ তিনি বলেছেন যে:-তাকে (যীশু) দেখলেই পিতাকে দেখা হয় এবং পিতা তাঁর মধ্যে রয়েছেন।মজার বিষয় হলো যীশুও শিষ্যদের ক্ষেত্রে একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন:-“সেই দিন তোমরা জানবে যে আমি পিতার মধ্যে আছি, তোমরা আমার মধ্যে আছ, আর আমি তোমাদের মধ্যে আছি (যোহন ১৪:২০)।
তিনি আরো বলেন:-“পিতা, যেমন তুমি আমাতে রয়েছ, আর আমি তোমাতে রয়েছি, তেমনি তারাও যেন এক হয়৷ তারা যেন আমাদের মধ্যে থাকে যাতে জগত সংসার বিশ্বাস করে যে তুমি আমাকে পাঠিয়েছ৷”(যোহন ১৭:২১)
তাহলে কী প্রমাণ হয় যে যীশুর শিষ্যরাও ঈশ্বর ছিলেন?উপরন্তু প্রচলিত তথাকথিত ইঞ্জিলের মধ্যে বলা হয়েছে,সকলের মধ্যেই ঈশ্বর বসত করেন (১ করিন্থীয় ৬:১৯-২০; ২ করিন্থীয় ৬:১৬; ইফিষীয় ৪:৬)।তাহলে কী সকলেই ঈশ্বর?
বাইবেলে মানুষদেরকে god বলা হয়েছে।বাইবেলের মধ্যে বলা হয়েছে:-“প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে ফরৌণের (ফেরাউনের) কাছে একজন ঈশ্বর করে পাঠিয়েছি।আর হারোণ তোমার ভাই হবে তোমার ভাববাদী।”(যাত্রাপুস্তক ৭:১)
(I have made thee a god to Pharaoh; বাংলায় “ঈশ্বর স্বরুপ “,আল্লাহর মতো”) ।
(গীতসংহিতা/যাবুর ৮২:৬ ; I have said,Ye are gods ; and all of you are children of the Most High) :আমি বলেছিলাম,তোমরা ঈশ্বর,তোমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান “(কিতাবুল মুকাদ্দাসেও :-তোমরা যেন আল্লাহ্ “: “যেন” শব্দটি সংযোজিত)।শুধু আল্লাহর পুত্র নয়,মুসা আঃ এবং সকল মানুষই আল্লাহ্ (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)।এগুলো কী আক্ষরিক অর্থে বুঝতে হবে ?না কিতাবুল মুকাদ্দাসের অন্যান্য সকল বক্তব্যের আলোকে বুঝতে হবে?
ঈসা মসিহের উপরের কথাও তাঁর ও নবীগণের সুস্পষ্ট কথার আলোকেই ব্যাখ্যা করতে হবে।
কিতাবুল মুকাদ্দাস বারংবার বলছে যে,ঈশ্বরকে দেখা যায় না,যা দেখা যায় তা ঈশ্বর নয়;তিনি কারো মধ্যে থাকেন না;তিনি কারো মতো নয়;তিনি এক,অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয় অর্থাৎ ঈশ্বরের সঙ্গে কারো তুলনা করা যাবে না যা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের (ইসাইয়া ৪০:১৮,২৫,২৮) পদে বলা হয়েছে।কাজেই উপরের কথাগুলি এ মূল নীতির আলোকেই ব্যাখ্যা করতে হবে।বস্তুত কারো মধ্যে আল্লাহর অবস্থান,কারো সাথে আল্লাহর এক হওয়া,কাউকে দেখলে আল্লাহ্ কে দেখা ইত্যাদির অর্থ তার সাথে আল্লাহর ঘনিষ্ঠতা,প্রেম,তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যক্ষ করা ইত্যাদি। মজার বিষয় হলো ত্রিত্ববাদী পৌলীয় খ্রিস্টানগণও এগুলো বাহ্যিক অর্থে বিশ্বাস করেন না। তারা কখনোই বিশ্বাস করেন না যে পিতা ঈশ্বর ও পুত্র ঈশ্বর এক বা যীশুর দেহ দেখলে প্রকৃতই পিতা ঈশ্বর কে দেখা হয়।বরং তারা বিশ্বাস করেন যে পিতা পুত্র নন,তারা উভয়েই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন ব্যক্তি। এরপরেও তারা এসকল কথাকে দলিল হিসেবে পেশ করেন
এছাড়া খ্রিস্টানদের ঈশ্বর দেখা সম্পর্কে খণ্ডন = বাইবেল অনুযায়ী ঈশ্বর আদম আঃ কে তার নিজের রুপে সৃষ্টি করেছিলেন (আদিপুস্তক অধ্যায় ১:২৬,২৭)। আদম আঃ এর সময় যে আদম কে দেখেছিল সে যেন ঈশ্বরকেই দেখেছিল, তাই বলে আদম আঃ ঈশ্বর হয়ে যায়নি।আর আদম আঃ এর মতো সকল মানুষের রুপ।এখন কী বলা যায় সকল মানুষ ই ঈশ্বর?কেননা সকল মানুষের রুপ ঈশ্বরের মত অর্থাৎ মানুষকে দেখাই মানে ঈশ্বরকে দেখা ঠিক যেমনটা যীশুর ক্ষেত্রে তথাকথিত খ্রিস্টানরা দাবি করে।
এছাড়া বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে:-“ঈশ্বরের মত আর কেউ নেই (২শ্যামুয়েল ৭:২২; গীতসংহিতা/সামসংগীত ৮৬:৮,১০)
বাইবেলের অন্যত্র আরো বলা হয়েছে:-“ঈশ্বরের সঙ্গে কারো কি তুলনা করতে পার? না! তুমি কি ঈশ্বরের ছবি আকতে পার? না।(ইসাইয়া ৪০:১৮,২৫,২৮)।প্রভু, সমস্ত জাতিগুলির উর্দ্ধে।তাঁর মহিমা আকাশ পর্যন্ত যায়।কোন ব্যক্তিই আমাদের প্রভু ঈশ্বরের মত নয়।ঈশ্বর স্বর্গের উঁচু আসনে বসেন।”(সামসংগীত ১১৩:৪-৫)
এখানে বলা হয়েছে:-“ঈশ্বরের মত দ্বিতীয় কেউই নেই অর্থাৎ ঈশ্বরের মত দেখতে কেউ নেই,তাঁর সাথে তুলনা করার মতোও কেউ নেই। যদি ঈশ্বরের সাথে তুলনা করার মতো কেউই না থাকে তাহলে যীশু কে দেখা মানে ঈশ্বরকে দেখা হলো কিভাবে?তাহলে তো এটা পরস্পর বিরোধী হয়ে গেল।
[বিঃদ্রঃ “ঈশ্বরের সঙ্গে কারো তুলনা করতে পারো না “-কথাটা দ্বারা স্বয়ং ঈশ্বরের নিজের চেহারা রুপ সৌন্দর্য অসীম গুণাবলীর মাহাত্ম্য সহ কোন কিছুতেই ঈশ্বরের সমকক্ষ কেউই নেই বোঝায় অর্থাৎ স্বয়ং ঈশ্বর নিজেই নিজের সমকক্ষ।]
এছাড়া আমাকে দেখা মানেই পিতাকে দেখা কথাটার প্রকৃত তাৎপর্য কী এবং এর দ্বারা যীশু আসলে কী বুঝিয়েছেন সেটা যথার্থ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করব স্বয়ং বাইবেল থেকেই ইং-শা-আল্লাহ ।
4) তাদের দাবি : যীশু ও পিতা এক!
যীশু বলেছেন:-“আমি ও পিতা, আমরা এক” [যোহন 10:30 ROVU]
অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন :
আমাদের জবাব : এইখানে মূল গ্রিকে (ἕν উচ্চারণ: hen) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ “এক/One”। আর এটা দেখিয়ে ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানগণ দাবি করেন যে,”যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন।”
জবাব:- যীশু ও ঈশ্বর এক; এ বাক্যও ঈশ্বরত্বের প্রমাণ নয়। অন্যের জন্যেও এ বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রমাণ:
17. আমি আর জগতে নাই, কিন্তু ইহারা জগতে রহিয়াছে, এবং আমি তোমার নিকটে আসিতেছি। পবিত্র পিতঃ, তোমার নামে তাহাদিগকে রক্ষা কর যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক।”
[যোহন 17:11 ROVU] অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন :
এইখানেও মূল গ্রিকে (ἕν উচ্চারণ: hen) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ “এক/One”। আর আপনি যদি উভয় আয়াতে ἕν শব্দের স্ট্রং নাম্বার দেখেন তাহলে দুটোরই সেম অর্থাৎ 1520 [e].
(নোট: “আমি ও পিতা, আমরা এক”-কথাটির প্রসঙ্গ পড়তে এখানে ক্লিক করুন:
এছাড়া আমরা যদি (যোহন ১০:২৯)-পড়ি সেখানে বলা হয়েছে:-
29. আমার পিতা, যিনি তাহাদের আমাকে দিয়াছেন, তিনি সর্বাপেক্ষা মহান ; এবং কেহই পিতার হস্ত হইতে কিছুই কাড়িয়া লইতে পারে না।”
যোহন 10:29 ROVU ; অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন :
অর্থাৎ যীশু থেকেও পিতা তথা ঈশ্বর মহান। তাহলে এখানে যীশু ও পিতার “এক”- হওয়া কথাটা দ্বারা কোন বিষয়কে বোঝানো হয়েছে ? কিন্ত আর যাইহোক “আমি ও পিতা এক/I and my Father are one”-কথাটার দ্বারা যীশুর ঈশ্বরত্ব ইঙ্গিতকে কখনো বোঝানো হয় নাই। এছাড়া “আমি ও পিতা এক”-ঠিক এরুপ “এক হওয়ার” একই কথা যীশু তাঁর শিষ্যদের সম্পর্কেও/বিষয়েও বলেছেন।তিনি বলেন:-
21. পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদের মধ্যে থাকে; যেন জগৎ বিশ্বাস করে যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ।
22. আর তুমি আমাকে যে মহিমা দিয়াছ, তাহা আমি তাহাদিগকে দিয়াছি; যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক;
23. আমি তাহাদের মধ্যে ও তুমি আমাতে, যেন তাহারা সিদ্ধ হইয়া এক হয়; যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহাদিগকেও প্রেম করিয়াছ।”
যোহন 17:21-23 ROVU; অনলাইন সোর্স থেকে পড়তে এখানে ক্লিক করুন :
গ্রিক সহ ইংরেজি অনুবাদ দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন:
উপরোল্লিখিত (যোহন ১৭:২১-২৩) নং ভার্সের তিন জায়গায়-ই গ্রিক (ἕν উচ্চারণ: hen) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ “এক/One”। আর আপনি যদি এই তিন আয়াতে ἕν শব্দের স্ট্রং নাম্বার দেখেন তাহলে সবগুলোই সেম অর্থাৎ 1520 [e].
তাহলে কী প্রমাণিত হলো যে,যীশুকে যে ঈশ্বরত্ব প্রদান করেছিলেন পিতা ঈশ্বর সে ঈশ্বরত্ব তিনি শিষ্যদেরকে প্রদান করলেন এবং পিতা ঈশ্বর,পুত্র ঈশ্বর ও শিষ্য ঈশ্বরগণ সকলে মিলে ১৫ জন ঈশ্বর!
এছাড়া এক মানে একাধিক ব্যাক্তির মধ্যে কোন উদ্দেশ্যের জন্য ইউনিটি বা ঐক্য। প্রমান পড়ুন
1. জন ১০ঃ৩০ আমি ও আমার পিতা এক। প্রশ্ন হলো পিতা পুত্র এক কি, কিসে এক । পিতা পুত্র এক গ্রুপ, এক টিম, এক ঐক্য জোট, এক মহা জোট, এক পরিবার, কোনটা হবে। পিতা পুত্র এক কি, কিসে এক?
2. আদিপুস্তক ২ঃ২৪, এইজন্য পুরুষ পিতামাতাকে ত্যাগ করে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং এইভাবে দুজনে এক হয়ে যায়| / এখানেও এক আছে।
3. জন ১৭ঃ২১ পিতা, যেমন তুমি আমাতে রয়েছ, আর আমি তোমাতে রয়েছি, তেমনি তারাও য়েন এক হয়৷
22 আর তুমি আমায় য়ে মহিমা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, যাতে আমরা য়েমন এক, তারাও তেমনি এক হতে পারে৷ / এখানে এক আছে
23 আমি তাদের মধ্যে, আর তুমি আমার মধ্যে থাকবে, এইভাবে তারা য়েন সম্পূর্ণভাবে এক হয়৷ জগত যাতে জানে য়ে তুমি আমায় পাঠিয়েছ৷ / এখানেও এক আছে, তাহলে এই, এক , মানে যে একাধিক ব্যাক্তির মধ্যে ইউনিটি বা ঐক্য কে বুঝিয়েছে , তা প্রমানিত হয় কি হয় না।
কোরআনে দেখি-এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ১৭
لَّقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا إِنْ أَرَادَ أَن يُهْلِكَ ٱلْمَسِيحَ ٱبْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُۥ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
অর্থঃ নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, মসীহ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ। আপনি জিজ্ঞেস করুন, যদি তাই হয়, তবে বল যদি আল্লাহ মসীহ ইবনে মরিয়ম, তাঁর জননী এবং ভূমন্ডলে যারা আছে, তাদের সবাইকে ধ্বংস করতে চান, তবে এমন কারও সাধ্য আছে কি যে আল্লাহর কাছ থেকে তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বাঁচাতে পারে? নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, সবকিছুর উপর আল্লাহ তা’আলার আধিপত্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।”
([এ ছাড়া যীশু ঈসা আঃ যে ঈশ্বর নন,এ সম্পর্কে রেফারেন্স (পবিত্র কোরআন,সূরা ৩:৫৯;৫:১৭,১৮,৭২,৭৩,৭৫,৭৮,১১৬,১১৭)]
কোরআনে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছে,যীশু তথা ঈসা আঃ তো ঈশ্বর-ই নন বরং তাঁর দাস।আর তাকে যারাই ঈশ্বর বলবে,তারাই শিরককারী এবং কাফের।এছাড়া দাউদ আঃ ও ঈসা আঃ এর মুখ থেকে ইহুদিদের অভিশাপ দেওয়া হয়েছে (৫:৭৮)।আর আল্লাহ্ যে একমাত্র ঈশ্বর এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নাই,সেটা কোরআনের অসংখ্য আয়াতে বলা হয়েছে (২০:১৪)……ইত্যাদি আয়াত দ্রষ্টব্য আছে।আল্লাহ্ এর সংজ্ঞা দেওয়া আছে (পবিত্র কোরআন ১১২:১-৪)
খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকগণ যীশুর খোদাত্বের প্রমাণ স্বরুপ “নতুন নিয়মে”যীশুর জন্য ব্যবহৃত “Son of God”-বা “খোদার পুত্র “।তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ,যীশুকে যেহেতু “খোদার পুত্র “-বলা হয়েছে,সেহেতু তারা খোদার পুত্রকেও খোদারুপে মান্য করেন।শাস্ত্রজ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই খ্রিস্টানরা এই ভ্রমে বা ভুলে পতিত। যদি তারা ভালোভাবে শাস্ত্র পাঠান্তে চিন্তা করতেন তবে দেখতে পেতেন,বাইবেলের “নতুন নিয়ম “ও “পুরাতন নিয়ম “-উভয় নিয়মেই খোদাপ্রাপ্ত অসংখ্য পবিত্র ব্যক্তিকে রুপকভাবে “খোদা বা খোদার পুত্র “-বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে বা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এজন্য তারা কেউই প্রকৃত “খোদা বা খোদার পুত্র “-হয়ে যাননি।
যেমন:-ইহুদিরা যখন যীশুকে পাথর মারতে উদ্যত হলো তখন যীশু বললেন,”কেন আমাকে পাথর মারো?”তখন ইহুদিরা তাঁকে উত্তর দিল,”কারণ তুমি মানুষ,অথচ নিজেকে খোদা করে তুলেছ ,এজন্য। তখন যীশু তাদেরকে উত্তর দিলেন,”তোমাদের ব্যবস্থায় কি লেখা নেই,’আমি বললাম,তোমরা খোদা?”যাদের নিকট খোদার বাক্য উপস্থিত হয়েছিল ,তিনি যদি তাদেরকে খোদা বললেন–আর শাস্ত্রের খন্ডন তো হতেই পারে না-তবে যাকে পিতা পবিত্র করলেন ও জগতে প্রেরণ করলেন,তোমরা কি তাঁকে বল যে,তুমি খোদা নিন্দা করছ।কারণ আমি বললাম যে,আমি খোদার পুত্র? “(যোহন ১০:৩২-৩৬)।”এখানে ইহুদিদের মিথ্যা অপবাদ খন্ডন করে যীশু বললেন যে,ইহুদি শাস্ত্র গীতসংহিতার (৮২:৬) পদে যেরুপ রুপকভাবে খোদার বাক্য লাভকারী ব্যক্তিদেরকে খোদা বলা হয়েছে ঠিক তেমনই তিনিও রুপকভাবে খোদার পুত্র। অন্যত্র যীশু বলেন,”ধন্য যারা মিলন করে দেয় ,কারণ তারা খোদার পুত্র বলে আখ্যায়িত হবে। ” (মথি ৫:৯)
5) তাদের দাবি : অধিকাংশ খ্রিস্টানরা বাইবেলের (যোহন ১০:৩০):-“আমি ও পিতা, আমরা এক”-এই পদ/অনুচ্ছেদ দেখিয়ে দাবি করে বলে যে,”যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন।
কারণ তাঁর এই কথা বলার দ্বারা যীশু নিজেকে ঈশ্বর বলতে চেয়েছেন ,যার জন্য ইহুদিরা তাঁকে পাথর মারতে আসে।খ্রিস্টানদের দাবী অনুযায়ী, ইহুদিরা বুঝতে পেরেছিল যে যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন (বাইবেল,যোহন ১০:৩২-৩৬)।
আমাদের জবাব : এখন কথা হলো-“আমি ও পিতা,আমরা এক”-কথাটি যীশু কোন প্রসঙ্গে বলেছিলেন?এটা যথার্থ ভাবে জানতে পারলেই উক্ত কথাটি বোঝা যাবে। আর আমি এখন প্রমাণ দেখাব,”আমি ও পিতা,আমরা এক”(যোহন ১০:৩২-৩৬)-উদ্ধৃতির মাধ্যমে কী সত্যিই যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন কিনা?এ ব্যপারে জানতে হলে প্রথমে আমাদের উক্ত কথার প্রসঙ্গ জানা প্রয়োজন। আর প্রসঙ্গ মানে হলো উল্লিখিত ঘটনার আগে-পরের তথ্য।
আমি (যোহন ১০:২৩)-অনুচ্ছেদ থেকে প্রসঙ্গ বলছি।যীশু মন্দির চত্বরে শলোমনের বারান্দাতে পায়চারি করছিলেন^২৩।যীশুর সঙ্গে তাঁর কোন শিষ্য নেই অর্থাৎ তিনি একা ছিলেন।তখন ইহুদিরা যীশুকে একা পেয়ে তাঁর চারপাশে ঘিরে দাঁড়াল^২৪।কারণ এই লোকটা বলছে সে ঈশ্বর। হতে পারে সে ঈশ্বরের দূত,ইহুদিরাও তাঁর কথা শুনে,আর যীশু তাদের অর্থাৎ ইহুদিদের সমালোচনা করে অনেক কথাই বলেছিল যে-তোমরা একটা অপরাধী জাতি,তোমরা সবাই অসৎ,তোমরা ব্যভিচারী,তোমরা লোকদের ক্ষতি কর,তোমরা পাপী।”আর ইহুদিরা কিন্তু যীশুর এসব কথা মনে রেখেছিল।যার জন্য হয়তো ইহুদিরা যীশুকে এই সময়ে বিপদে ফেলতে চাচ্ছিল।তখন যীশু একা মন্দিরে ছিল বলে ইহুদিরা একটা সুযোগ পেয়ে গেল তাঁকে উচিত শিক্ষা দিতে।তাই তারা যীশুকে ঘিরে ধরল আর বলল,”তুমি আর কতকাল আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে? তুমি যদি মশীহ হও তাহলে আমাদের স্পষ্ট করে বল?^(যোহন ১০:২৪) অর্থাৎ আর কতদিন আপনি
আমাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত করবেন,যদি আপনি খ্রিস্ট হয়ে থাকেন তাহলে সেটা সরাসরি বলুন? অন্য কথা আপনি আমাদের সরাসরি না বলে কেন অস্পষ্ট করে বলছেন?আপনি আমাদের সরাসরি কিছুই বলছেন না।আপনি এখন সরাসরি বলেন যে সেই মসিহ আপনি কিনা?
“এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, ‘’আমি তোমাদের ইতিমধ্যেই বলেছি,”আর তোমরা তা বিশ্বাস করছ না৷ আমি আমার পিতার নামে যেসব অলৌকিক কাজ করি সেগুলিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবে^২৫।
কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করো না, কারণ তোমরা আমার পালের মেষ নও^২৬।
আমার মেষরা/অনুসারীরা আমার কথা শোনে৷ আমি তাদের জানি, আর তারা আমার অনুসরণ করে^২৭।আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই, আর তারা কখনও বিনষ্ট/ধ্বংস হয় না, আমার হাত থেকে কেউ তাদের কেড়ে নিতেও পারবে না^২৮।আমার পিতা, যিনি তাদেরকে আমায় দিয়েছেন, তিনি সবার ও সবকিছু থেকে মহান, আর কেউ পিতার হাত থেকে কিছুই কেড়ে নিতে পারবে না^২৯।
(এখানে,যীশু বলেছেন,”তিনি [সদাপ্রভু ঈশ্বর]-সবার ও সবকিছু থেকে মহান।”আর যীশু যদি ঈশ্বর হত,তাহলে তিনি এই কথা কখনোই বলতেন না। কেননা নিজের ক্ষেত্রে কখনোই “তিনি”-শব্দ ব্যবহার করা যায় না।কারণ “তিনি “-শব্দ টা নিজের ক্ষেত্রে নয় বরং অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ এখানে দ্বিতীয় আরেক জনকে বোঝানো হয়।এ ছাড়া ইংরেজি গ্রামারানুযায়ী “তিনি”-শব্দ টা হচ্ছে Plural number এর third person।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো বাইবেলের কোথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিজ মুখে যীশুর একটাও বাণী পাওয়া যায় না যে তিনি ঈশ্বর)
এরপরেই চলে আসে, যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য খ্রিস্টানদের সেই অনুচ্ছেদ যার ভিত্তিতে তারা দাবি করে যীশু ঈশ্বর যাতে বলা হয়েছে:-” আমি ও পিতা, আমরা এক”^৩০।আর এটাই হলো প্রসঙ্গটা।
তার মানে যখন কোন মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে,আর ঈশ্বর তখন তার প্রতি খেয়াল রাখেন,আর আমি তোমাদের শিক্ষক ও প্রভু হিসেবে বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখব যে আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যেই এক অর্থাৎ
এখানে যীশু খ্রিস্ট এমন কিছু বলেনি যে,”তিনি সর্বশক্তিমান,স্রষ্টা,মহান ঈশ্বর…।অর্থাৎ -“আমি ও পিতা এক”-কথাটির মানে হচ্ছে,ঈশ্বর ও যীশুর উদ্দেশ্য একই ।কারণ ঈশ্বর যীশুকে কিছু নির্দেশ অর্থাৎ উদ্দেশ্যের জন্য প্রেরণ করেছেন। আর এই উদ্দ্যেশ্য অর্থাৎ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কে যীশু বাস্তবায়িত করবেন। মানে ঈশ্বরের যেই উদ্দেশ্যের জন্য যীশু কে প্রেরণ করেছেন সেই একই উদ্দেশ্যের জন্য যীশু পৃথিবীতে এসেছেন অর্থাৎ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে হচ্ছে যীশুর উদ্দেশ্য যাকে বলা হয় একই উদ্দেশ্য।আর “ইহুদিদের মতে,যীশু ধর্ম অবমাননা করেছিল কারণ তারা যীশুর কথার মূল তাৎপর্য তখন বুঝতে পারছিল না।
একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝা যাক:i)আমিও ডাক্তার,আমার বাবাও ডাক্তার। এখন যদি বলি:-“আমি ও পিতা/বাবা,আমরা এক।”তাহলে বোঝায় কি ,আসলে আমি ও বাবা একই ব্যক্তি অর্থাৎ দুজনে একজন ব্যক্তি ?যদি এটা হয়,তাহলে আমিই কী আমার বাবা/আব্বা হয়ে যাব নাকি অথচ এটা কুযুক্তি,পাগলের কথা। কেননা নিজে কখনোই নিজের বাবা/আব্বা হওয়া যায় না। তাহলে “আমি ও পিতা এক “-মানে কী?আসলে “আমি ও পিতা,আমরা এক”-কথাটার মানে হলো,আমি যেমন ডাক্তার,আমার বাবাও তেমন ডাক্তার অর্থাৎ আমার এবং বাবা/পিতার কাজ/উদ্দেশ্য একই ধরণের।ঠিক এমন উদ্দেশ্যে কে সামনে রেখেই যীশু বলেছেন:-“আমি ও পিতা,আমরা এক।”(যোহন ১০:৩০)।আর যীশু উক্ত কথা উপমার ন্যায় বলেছেন।
Example : ধরুন- আপনার বাবা আপনাকে অনেক আদর-যত্ন করেন এবং ভালোবাসেন। এখন আপনার বাবা কোন একজন কে বলল,”আমার ছেলেকে ভালোবাসা মানেই,আমাকে ভালোবাসা। “এখন কি এটা হয়ে যাবে নাকি আপনিই আপনার বাবা?কেননা সবাই ভালোবাসে আপনাকে কিন্তু আপনার বাবা কে নয়।আর আপনাকে ভালোবাসলে কিভাবে এটা বাবাকেও ভালোবাসা হয়ে যাবে অর্থাৎ আপনিই কী আপনার বাবা নাকি?এখন কী বলেন আপনি?আর এ ছাড়া যীশু যে ঈশ্বর ছিলেন না তারও অনেক প্রমাণ দেওয়া যাবে।এ সম্পর্কে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে নিচে। যাই হোক,
কিন্তু ইহুদিরা এসবও বুঝেনি।তারা ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছিল।তারা যীশুকে মারতে গিয়েছিল।এমন একটা প্রচলিত বাক্য আছে:”যদি ঝামেলা পাকাতে চান,তাহলে অযুহাতের অভাব হবে না।”আর এটা বাস্তবিক সমাজেই দেখা যায় যে,কোন ঝামেলা পাকাতে চাইলে,লোকেরা বিভিন্ন অযুহাত খুঁজে।আবার স্কুল-কলেজেও দেখা যায় এসব অযুহাত।
আর ইহুদিরাও ঝামেলা পোহাতে চাচ্ছিল। তাই “ইহুদীরা যীশুকে মারার জন্য আবার পাথর তুলল”^৩১।
তখন “যীশু তাদের বললেন,’‘পিতার সাহায্যে আমি অনেক ভাল কাজ করেছি। তার মধ্যে কোন কাজটার জন্য তোমরা আমাকে পাথর মারতে চাইছ?”^৩২
“ইহুদীরা এর উত্তরে তাঁকে বলল, ‘তুমি য়ে সব ভাল কাজ করেছ, তার জন্য আমরা তোমায় পাথর মারতে চাইছি না৷ কিন্তু আমরা তোমাকে পাথর মারতে চাইছি এই জন্য য়ে, তুমি ঈশ্বর নিন্দা করেছ৷ তুমি একজন মানুষ, অথচ নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করছ৷’^৩৩
হ্যাঁ এটাই ছিল প্রসঙ্গ।এখানে যীশুর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ,তাঁর কথাগুলো ইহুদিদের কাছে অস্পষ্ট ছিল।কারণ যীশু ইহুদিদের স্পষ্টভাবে কিছুই বলছিলেন না।ইহুদিরা তাঁকে বলেছিল,”আপনি সবকিছুই সরাসরি অর্থাৎ স্পষ্টভাবে বলেন?
কিন্তু যীশু তাদের কাছে স্পষ্টভাবে কিছুই বলছিলেন না যা ছিল ইহুদিদের প্রথম অভিযোগ।অর্থাৎ যীশু স্পষ্ট করে বলছিলেন এটাই ছিল প্রথম মিথ্যা অভিযোগ।২য় অভিযোগ:আপনি (যীশু) মানুষ হয়ে ধর্মের অবমাননা করেছেন,মানুষ হয়ে নিজেকে ঈশ্বর বলেছেন।উত্তর কি হবে?(এখানে কথা হলো যীশু ইহুদিদের কাছে স্পষ্টভাবে কিছুই বলছিলেন না অর্থাৎ যীশুর অস্পষ্ট কথা ইহুদিরা সঠিকভাবে বুঝে নাই কিন্তু তারা নিজেরা যেটা বুঝেছে সে অনুযায়ী যীশু কে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করেছে)
তখন তিনি বললেন,”তোমরা যখন বলছো আমি ঈশ্বর।”ধরুন:আপনি ডাক্তার। কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করল,”আপনি কি ডাক্তার?তখন আপনি বলবেন,”হ্যাঁ,আমি ডাক্তার।”আপনি/আমি যদি ডাক্তার হই,তাহলে অস্বীকার করব কেন?সরাসরি না বলে কেন উল্টো-পাল্টা কথা বলব?যদি সত্যি হয় যে আমি/আপনি ডাক্তার,তাহলে সরাসরি না বলে কেন উল্টা-পাল্টা/অস্পষ্ট ভাবে কথা বলব?
তখন,”যীশু তাদের বললেন,’‘তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় [তাওরাতে ঈশ্বরের যে বিধি-বিধান অর্থাৎ মোশির কিতাবে] কি একথা লেখা নেই যে,”আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর৷”^৩৪
এখানে যীশু ইহুদিদের উপহাস করে বলেছেন।কেননা, কারণ তিনি পূর্বেই বলেছিলেন,”ভেবো না যে,” আমি মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাব্বাদীদের/নবীদের শিক্ষা ধ্বংস করতে এসেছি৷ আমি তা ধ্বংস করতে আসিনি বরং তা পূর্ণ করতেইএসেছি (মথি ৫:১৭)।
আমি তোমাদের সত্যি বলছি,”যেদিন আমাদের শেষ বিচার হবে,সেদিন একটা ক্ষুদ্র কণাও আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে পারবে না।সবার বিচার হবে তখন আইনের ফাঁক দিয়ে …!?যীশু তখন তাদের উপহাস করছিলেন যে এসব তো তোমাদের ধর্মগ্রন্থেই আছে।
এটা কি তোমাদের আইনে লেখা ছিল না,”আমি ঈশ্বর বলছি, “তোমরা ঈশ্বর। “(সামসংগীত ৮২:৬)
উপরের উদ্ধৃতিতে দেখুন:ঈশ্বর নিজেই ইহুদিদের বলেছেন,”তোমরা সবাই ঈশ্বর।”একারণেই যে ইহুদিরা সম্মানিত ঈশ্বরের পুত্র।এখানে কিন্তু ঔরসজাত পুত্রের কথা বলা হচ্ছে না।যাই হোক ওল্ড টেস্টামেন্টর থেকেই উদ্ধৃতি দিলেন যে এভাবেই কথা বলি।কারণ এটা ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য। ইংরেজরা যখন কোর্টে বিচারকের সামনে কথা বলে,তখন তারা বলে ,”My lord…..my lord. “যার অনুবাদ:আমার প্রভু…..আমার প্রভু।এখন কি বলব,সে আমার/আপনার ঈশ্বর?এখানে সে “my lord “-বলে কি বোঝাতে চাচ্ছে?এভাবেই অর্থাৎ “my lord “-বলার মাধ্যমে আসলে বিচারকে সম্মান দেখানো হচ্ছে,যা ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বিচার কে “my lord “-বললেই আর বিচারক “ঈশ্বর “-হয়ে গেল/যাবে না।আর এটাই হলো তাদের ভাষা এবং একটা ভাষার অলংকরণ। আর এজন্য যীশুও ঠিক অনুরূপ বলেছিলেন।
তখন যীশু তাদের বললেন,”তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে,”আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর৷’'(যোহন ১০:৩৪)।
ওল্ড টেস্টামেন্ট যদি,ঈশ্বর ইহুদিদের কে “ঈশ্বর “-বলতে পারেন,আবার তিনিই নবী-রাসূলদের বলেছেন “ঈশ্বর “। বুক অব এক্সোডাসে ঈশ্বর মোশি [মুসা আঃ]-কে বলেছেন,”শোনো,আমি তোমাকে ফারাওদের “ঈশ্বর “-বানিয়েছি এবং তোমার ভাই হারুন হবে তোমার সাহায্যকারী। “(যাত্রাপুস্তক ৭:১)
এখন আসলে মোশি/মুসা আঃ কি ঈশ্বর?অথচ এই কথাটা বাইবেলেই বলা হয়েছে।এটা আসলে একটা ভাষায় কথা বলার ধরণ যে তারা এভাবেই কথা বলত।আর এটাই হলো ভাষার অলংকার।তাই এভাবেই যীশুও বলেছেন। তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে,”আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর৷’”স্রস্টা ইহুদিদের ঈশ্বর বলেছেন।
তাই যীশুও তাদের বলেছেন। যীশু তাদের বললেন, ‘তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে ‘আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর৷শাস্ত্রে তাদেরই ঈশ্বর বলেছিল যাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী এসেছিল; আর শাস্ত্র সব সময়ই সত্য৷”(যোহন ১০:৩৪-৩৫)।
যীশুও ঠিক ঈশ্বরের কথানুযায়ী বলেছিল।
আমিই সেই ব্যক্তি, পিতা যাঁকে মনোনীত করে জগতে পাঠালেন৷ আমি বলেছি যে,”আমি ঈশ্বরের পুত্র৷’”তবে তোমরা কেন বলছ যে আমি ঈশ্বর নিন্দা করছি?^৩৬
অর্থাৎ আমি ধর্ম অবমাননা কারী?কারণ কী,আমি নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলেছি অথচ তোমাদের এসব কথা অযৌক্তিক।যখন কেউ তোমাদের ঈশ্বর বলছে,তোমরা সেটা মেনে নিচ্ছ!তাহলে আমার কথা মানছো না কেন যে ,আমি বলেছি,”আমি ঈশ্বরের পুত্র?”আর যীশুর ন্যায় ঈশ্বরের পুত্র অনেকগুলো আছে বাইবেলের মধ্যে।
((([নোট:বাইবেলে আরো বহু লোককে রুপকভাবে খোদার পুত্র বলা হয়েছে। যেমন:-“সদাপ্রভু এই কথা বলেন,ইস্রাইল আমার পুত্র,আমার প্রথম জাত।”(যাত্রাপুস্তক ৪:২২)।
“তুমি আমার পুত্র “(গীতসংহিতা ২:৭)।শলোমন খোদার পুত্র “(১বংশাবলী, ২২:১০; ২৮:৬)।”যতলোক খোদার হুকুম দ্বারা চালিত হয়,তারাই খোদার পুত্র “(রোমীয় ৮:১৪)।”আমরা খোদার সন্তান “(রোমীয় ৮:১৬)।”তোমরা তোমাদের/আপনাদের খোদা সদাপ্রভুর সন্তান “(দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:১)।”আমাদের একমাত্র পিতা আছেন,তিনি খোদা “(যোহন ৮:৪১)।”খোদা আপন পবিত্র বাসস্থানে পিতৃহীনদের পিতা “(গীতসংহিতা ৬৮:৫)।”পৃথিবীতে কাউকে “পিতা “বলে সম্বোধন কর না,কারণ তোমাদের পিতা একজন,তিনি সেই স্বর্গীয়”(মথি ২৩:৯)।অতএব যীশু খোদা বা খোদার পুত্র নন বরং তিনি খোদার বাক্য লাভকারী এক পবিত্র ভাববাদী ,নবী। বাইবেলে অন্যান্য লোককে যেমন খোদার পুত্র বলা হয়েছে,তেমনই যীশুকেও খোদার পুত্র বলা হয়েছে অনুরুপ ভাবে।
যীশুকে বাইবেলে খোদার পুত্র কেন বলা হয়েছে সে বিষয়ে একটি উদ্ধৃতি প্রসঙ্গিক।হিব্রুতে “খোদার পুত্র “স্থলে “বেনে এলোহীম “-বলা হয়েছে যার অর্থ অত্যন্ত প্রিয়,রাজা,স্বর্গীয় দূত,খোদার সেবক।”(দেখুন Gesenius কৃত Hebrew & English Lexican ,English Translation -J.W .Gibbs ,Page:-34).এছাড়া “খোদার পুত্র ” বা “ঈশ্বরপুত্র “-শব্দটি একটি সম্মানসূচক রাজকীয় পদবী।রোমান সম্রাট এই উপাধিটি (ডিভি/ফিলিউস) ধারণ করতেন। কিন্তু,যীশু এসবে খুবই বিরক্ত হতেন এবং বার বার লোকদেরকে এ বিষয়ে সাবধান করতেন যদিও নিবৃত্ত করতে পারতেন না।
He [God] gave His only begotten son.(son.(Ak .James Version ,John 3:16)..।অর্থঃখোদা তাঁর একমাত্র পুত্র [যীশু] কে দান করলেন। “খ্রিস্টান দের অনেকেই পুত্র শব্দের রুপক অর্থ বললেও প্রকৃতপক্ষে রুপক অর্থের আড়ালে প্রকৃত অর্থই ব্যবহার করে,যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলে begotten , not made. অথচ only begotten son of God বাক্যের begotten ঔরসজাত/জন্ম দেয়া সন্তান বলতে স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনের অন্তর্নিহিত অর্থই প্রকাশ করে। “জন্ম দেয়া ” স্রস্টার নয় বরং সৃষ্ট জীবের একটি স্বভাব; তা জীব-জগতের,জীবের নিন্ম শ্রেণীর যৌন কাজের অন্তর্ভুক্ত।এটা মানুষের জৈব-স্বভাবের চাহিদার উপর নির্ভরশীল দৈহিক কার্য।স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনে উভয়ের দেহ হতে কোন তরল পদার্থ নির্গত হয়ে সন্তান জন্মের সূচনা হয়।তাই কাজেই “খোদা সন্তান জন্ম দিয়েছেন “(নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক) বললে স্বভাবগতই ধারণা হয় যে-খোদা বুঝি দেহ ধারী কোন বস্তুগত সত্ত্বা,তাঁর বুঝি স্বজাতির কোন স্ত্রীও আছে এবং তাঁর দেহ হতে বুঝি কোন তরল পদার্থও নির্গত হয়। (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)।
Son of God “-প্রসঙ্গে সুসমাচার লেখক “বার্ণবার “উত্তরঃ বার্ণবা যিনি পৌলের সহপ্রচারক ও বন্দিজীবনের সঙ্গী।তিনি তার সুসমাচারে যীশুর একত্ববাদ প্রচারের কথা উল্লেখ করে লিখেন,” যারা যীশুকে খোদার পুত্ররুপে পূজা/উপাসনা করে তাদের উপর মহাত্মা যীশু অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।যেমনঃ Crused be every One who shall insert into my saying that I am the son of the God”(Chapter-53).বার্ণবা তার সুসমাচারের শেষ -২২২ অধ্যায়ে লিখেন Certain evil men,….preached ,and yet preach,that Jesus is the son of God,among whom is Poul decived.অর্থাৎ কয়েকজন অপবিত্র লোক,…..প্রচার করে থাকে যে,যীশু খোদার পুত্র,আর এসব প্রচারকদের মধ্যে প্রতারিত পৌলও একজন]))
যাইহোক মূল আলোচনায় আসি:বাইবেলের মধ্যেই দেখা গেছে ঈশ্বরের অনেকগুলো পুত্র রয়েছে। আসলে এটা ভাষার অলংকার ।তারা এভাবেই কথা বলত বলে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে। আসলে :-“আমি ও পিতা এক”-কথাটির দ্বারা যীশু বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এক কিন্তু নিজেকে তিনি ঈশ্বর দাবী করছেন না।
যীশু যে নিজেকে কখনোই ঈশ্বর দাবী করেননি এবং কি তিনি যে ঈশ্বর নন,এর আরেকটি প্রমাণ হলো যা কিনা খ্রিস্টানরা বলে,যীশু তাঁর মৃত্যুর সময় চিৎকার করে বলেছিলেন:-“এল্লাই,এল্লাই,লামা শবাক্তানী। “যার অনুবাদ :প্রভু …প্রভু!আবার আমায় কেন ত্যাগ করছো?”(মার্ক ১৫:৩৪; মথি ২৭:৪৬)
এছাড়া আরেক ভাবে প্রমাণ হয় যীশু ঈশ্বর নয়।খ্রিস্টানদের দাবী অনুযায়ী যীশু নাকি ঈশ্বর,যদি ঈশ্বর হয়ে থাকে,তাহলে এই কথা যীশু কাকে বলেছিলেন “- প্রভু …প্রভু!আবার আমায় কেন ত্যাগ করছো?”এই কথা কি কখনো নিজেকে বলা যায়?কেন আমি নিজেকে ত্যাগ করলাম?নিজেকে কখনো ত্যাগ করা যায়?ত্যাগ করলে তো শরীর ত্যাগ করতে হবে। কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে?তিনি সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহর কাছে কেদেছেন,তাঁকে বলেছেন।আর এটা হলো সেই ঈশ্বর,যীশু যাঁর উপাসনা করেছেন।”আর এ থেকেই বোঝা যায় যে যীশু ঈশ্বর নন বরং সদাপ্রভু মহান আল্লাহ্-ই একমাত্র তাঁর সহ সবার ঈশ্বর।
তাছাড়া তাঁর অর্থাৎ যীশুর আগমনের পূর্বে সদাপ্রভু ঈশ্বর ওল্ড টেস্টামেন্টে দাবি করেছেন,তিনিই একমাত্র ঈশ্বর, যাঁর আগে এবং পরে আর কেউই/কোন-ঈশ্বর-ই ছিল না এবং কি নাজাতদাতা,পরিত্রাণ দাতাও ছিল না। (যীশাইয়/ইসাইয়া ৪০:১৮,২৮; ৪৩:১০-১১; ৪৪:৬-৭,২৪; ৪৫:১৮; ৬৪:৪; হোসেয়া ১৩:৪; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩৫,৩৯; ৬:৪; ১৩:৪; ৩২:৩৯; গীতসংহিতা/সামসংগীত ৮৩:১৮; ৮৬:৮,১০; যাত্রাপুস্তক ৮:১০; বংশাবলী-১, ১৭:২০; ২ শ্যামুয়েল ৭:২২;
এছাড়া বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে যীশু বলেছেন :”আমাদের ঈশ্বর একজন “(মার্ক ১২:২৯-৩০; দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৫),এফিশীয় ৪:৬),১ করিন্থীয় ৪:৬),(প্রকাশিত বাক্য/প্রত্যাদেশ ১:৮)
আর পবিত্র কোরআনেও তাই বলা হয়েছে যে আল্লাহর আগে এবং পরে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই।তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং সর্বশক্তিমান:সূরা বাকারা:২৯,১৬৩,২৫৫;আল আন’আম:১,৪৬,৭৩,১০১;আল-আম্বিয়া:৩৩,১০৮;আল-মুমিনুন:১২-১৪,৮৮,৯১;আন নুর:৪৫;আল-ফুরকান:২;সূরা লোকমান:১০;আর রহমান১৪-১৫;সূরা আলে ইমরান:২৬,৬২,৬৪;আন নিসা:৫৩,১৭১;আল মায়্যিদাহ
১৭,৭৩,৭৬;আন নাহল:২২,৫১,৭৩;বনি ইস্রায়েল:২২,১১১;সূরা সাবা:২২;আল-ফাতির:১৩;আয-যুমার:৪৩,
সুরা যুখরুফ:৮৪,৮৬;আল-ফাতহ:১১,১৪;আল-আরাফ:৪৫;সূরা ইব্রাহিম:৫২;আল-কাহাফ:১১০,
আল-হাজ্জ্ব:৩৪;আন-নামল:৬০;আল-কাসাস:৭১;সূরা ছোয়াদ:৬৫;হা-মীম আস-সাজদাহ:৬;সুরা আত-তুর:৪৩,সূরা ইখলাস:১-৪ ।এছাড়া আরো অসংখ্য আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ কেবলমাত্র একজন। তিনি ছাড়া আর কোন উত্তম ঈশ্বর নেই।আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় সত্ত্বা ঈশ্বর।(পবিত্র কোরআন ১:১; ৩:১৮; ৫:১০৯; ৬:১২৪; ৭:১৮০; ৮:৪০; ১৬:৯১; ২০:৮; ৫৭:৫; ৬৫:৩; ৭৪:৫৬; ৮৫:২০)।
(আল-খবীর যিনি গোপন ও প্রকাশ্য,ঘটিত ও অঘটিত সব কিছুই সম্বন্ধে অবহিত আছেন ২:২৩৫; ১৭:৪৪; ২২:৫৯; ৩৫:৪১,)
(যিনি আস-সালাম,ত্রুটি মুক্ত এবং মহান শ্রেষ্ঠত্বের চুড়ান্ত ৫৯:২৩)
(আল ওয়াদুদু যিনি সীমাহীনভাবে ভালোবাসেন এবং ভালোবাসা পান ১১:৯০; ৮৫:১৪)
(আল মুমিন বিশ্বস্ত,ওয়াদা পালনকারী ৫৯:২৩)
(আল হাক্ক চির সত্য ৬:৬২; ২২:৬; ২৩:১১৬; ২৪:২৫)
(যিনি চিরঞ্জীব ২:২৫৫; ৩:২; ২৫:৫৮; ৪০:৬৫)
(আল গণী যাঁর কোন অভাব নেই ৩:৯৭; ৩৯:৭; ৪৭:৩৮; ৫৭:২৪; ৯:২৮)
(আল মুগনীয়্যু যিনি সব ধরনের অভাব দূর করেন ৯:২৮)।এছাড়া আরো ইত্যাদি আয়াতে মহান আল্লাহ্ এর পবিত্র গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।
তাহলে দেখা যায় যে,সদাপ্রভু ঈশ্বর-ই একমাত্র ঈশ্বর। কেননা তিনি যে ঈশ্বর,সেটা স্বয়ং নিজেই দাবি করেছেন। কিন্তু যীশু কোনভাবেই ঈশ্বর নন।এবং কী কখনো ঈশ্বর বলেও দাবি করেন নাই।কারণ যীশু ঈশ্বর ছিলেন না বরং ঈশ্বরের দাস।আর এসব প্রমাণ-ই যথেষ্ট যে যীশু কোনভাবেই ঈশ্বর দাবী করেননি এবং কি তিনি ঈশ্বর নন।”((যোহন ৬:৬৯; ৭:১৬; ১২:৪৭-৫০; ১৪:১; ১৭:৩,১১,২১; ২০:২৩),(আদিপুস্তক ১:১৭),(মথি ৯:৮; ১০:৪০; ১২:৮; ১৩:৩৭,৫৭; ২১:১১; ২৭:৪৬),(প্রেরিত ৩:১৩; ৪:২৭),(মার্ক ১৪:৩৬))
যীশু যে ঈশ্বর এই কথা বাইবেলের কোথাও বলা হয় নাই অথচ খ্রিস্টানরা যীশু কে ঈশ্বর বলে দাবি করে।কিন্তু যীশু যে একজন নবী/ভাববাদী একথা বাইবেলের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে অথচ খ্রিস্টানরা যীশুকে নবী বলে মানে না।
দেখুন যীশু যে নবী,এই তার প্রমাণ (যোহন ৪:১৯; ৯:১৭)।
আরো আছে অনেক জায়গায় যেখানে যীশু বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে নিজেকে নবী/ভাববাদী বলেছেন (যোহন ১:২৫; ৪:১৯; মার্ক ৬:১৫; ৮:২৮; ১৬:১৪-এসব ভার্সে যীশু কে নবী বলা হয়েছে বাইবেলে)।এছাড়া যীশু নিজেই বলেছিলেন তিনি একজন নবী/ভাববাদী (যোহন ৪:৪৪; লুক ৪:২৪; মার্ক ৬:৪-যীশু খ্রিস্ট নিজে বলেছন,”কোন নবীকে নিজ দেশে মর্যাদা দেওয়া হয় না।”আর যীশুকেও তাঁর দেশে মর্যাদা দেওয়া হয়নি অর্থাৎ তিনি নিজেকে নবী দাবি করেছেন যা কিনা বাইবেলে স্পষ্ট আছে কিন্তু তিনি কখনোই নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেন নাই। অথচ খ্রিস্টানরা এর বিপরীত কাজ করে।এছাড়া যীশু খ্রিস্টের সময়কার ৫০০০ হাজার লোকে সাক্ষী দিয়েছিল যে তিনি একজন নবী (যোহন ৬:১৪; মথি ২১:১১)।এছাড়া আরো বলা হয়েছে (যোহন ৭:১৪,৪০-যে যীশু খ্রিস্টের আশেপাশের লোকেরা তাঁকে নবী বলে ডাকাডাকি করত)।(লুক ৭:৩৯; ৯:৮,১৯)।আরেকটা জিনিস দেখবেন বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টর কোথাও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়নি যে ঈশ্বর পৃথিবীতে আসলেন মানুষ রুপে।এটা কিন্তু এক জায়গায়ও বলা হয়নি যে,”ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষরুপে আসবে।বরং( বুক অব ডিউটোরমী ২২:১৯) তে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,”ঈশ্বর তিনি কখনো মানুষ নন।”আর যে মানুষ তিনি কখনোই ঈশ্বর নন।
আবার বলা হয়েছে:”ঈশ্বর মানুষ নন; তিনি মিথ্য়ে বলবেন না| ঈশ্বর মানুষ নন।”(গণনা পুস্তক ২৩:১৯)
বাইবেল এই কথা স্পষ্টভাবে বলেছে।আর যীশু যদি মানুষ হন,তাহলে তিনি কোনভাবেই ঈশ্বর নন যা বাইবেলের স্পষ্ট শিক্ষা।
আর পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে যীশু তথা ঈসা আঃ ঈশ্বর নন বরং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ এর দাস/বান্দা। প্রমাণ দেখুন:(পবিত্র কোরআন,সূরা আলে ইমরান:৫৯,৮৪;
সূরা আল-মায়্যিদাহ:১৭,১৮,৪৪,৭২,৭৩,৭৫,৭৮,১১৬,১১৭)
এখন আসুন , এক ঈশ্বরের প্রমাণ ও যীশু বা ঈসা (আ) এর ঈশ্বরত্ব বা ঈশ্বরের পুত্র বা ত্রিত্ববাদ বিষয়ক খ্রিস্টানদের মিথ্যাচার বা ভুল ভ্রান্তি বা তাদের দাবি খন্ডন ও খ্রিষ্টান ধর্মে বা বাইবেলে ঈশ্বর এর ধারণা প্রমাণের জন্য কিছু রেফারেন্স পেশ করি ।
“ঈশ্বরের সাহায্যেই আমি মন্দ দূর করি।” (লূক ১১:২০)
“যদি তোমরা আমাকে প্রেম করিতে, তবে আনন্দ করিতে যে, আমি পিতার নিকটে যাইতেছি; কারণ পিতা আমার অপেক্ষা মহান্।” (যোহন ১৪:২৮) যিশু
“যিনি আমার পিতা ও তোমাদের পিতা, এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর, তাঁহার নিকটে আমি ঊর্ধ্বে যাই।” (যোহন ২০:১৭)
‘হে ইহুদী ভাইয়েরা, একথা শুনুন; নাসরতীয় যীশুর দ্বারা ঈশ্বর বহু অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ করে আপনাদের কাছে প্রমাণ দিয়েছেন য়ে তিনি সেই ব্যক্তি যাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন; আর আপনারা এই ঘটনাগুলি জানেন৷
पশিষ্যচরিত 2:22
মার্ক লিখিত সুসমাচারে “সর্বপ্রধান আজ্ঞার বিষয়ে শিক্ষা ” শিরোনামে বলা হয়েছে:-
28 আর তাদের একজন ব্যবস্থার শিক্ষক কাছে এসে তাদের তর্ক বিতর্ক করতে শুনলেন এবং যীশু তাদের ঠিকঠিক উত্তর দিচ্ছেন শুনে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,”সব আদেশের ভেতরে কোনটী প্রথম?”
29. যীশু উত্তরে বললেন,প্রথমটি এই, “হে ইস্রায়েল, শোন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একমাত্র প্রভু;”
30. “আর তুমি সেই ঈশ্বরকে তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে ভালবাসবে।”
31. দ্বিতীয়টি এই, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে” এই দুইটি আদেশের থেকে বড় আর কোন আদেশ নেই।
32. ব্যবস্থার শিক্ষক তাঁকে বললেন, হে সৎ গুরু, আপনি সত্যি বলছেন যে, তিনি এক এবং তিনি ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নেই;
33. আর সমস্ত হৃদয়, সমস্ত বুদ্ধি, তোমার সমস্ত শক্তি ও ভালবাসা দিয়ে ঈশ্বরকে ভালবাসা এবং প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসা সব হোম ও বলিদান থেকে ভালো।
34. তখন সে বুদ্ধিমানের মতো উত্তর দিয়েছে শুনে যীশু তাকে বললেন, তুমি ঈশ্বরের রাজ্যের খুব কাছাকাছি আছ (অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করবে)। এর পরে তাঁকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করতে আর কারোর কোনো সাহস হলো না।”(মার্ক ১২:২৮-৩৪)[প্রায় একই কথা বলা হয়েছে মথি ২২:৩৪-৩৮ পদে]।
মথি লিখিত সুসমাচারের উপযুক্ত দুটি আজ্ঞার কথা উল্লেখ করে যীশু বলেছেন:-
40. এই দুটি আদেশেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের বই নির্ভর করে।”(মথি ২২:৪০)
এ থেকে একটা বাস্তব মহা সত্য আরো সুস্পষ্ট ভাবে জানা গেল।আর তা হলো প্রথম যে আজ্ঞা/আদেশটি তাওরাত ও সকল ভাববাদীদের গ্রন্থগুলোতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যা ঈশ্বরের রাজ্যের নৈকট্যের (অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করার) মূল কারণ তা হলো একত্ববাদ (but not Trinity) অর্থাৎ এ কথা বিশ্বাস করা যে সদাপ্রভু মহান আল্লাহই বলেন একমাত্র ঈশ্বর বা উপাস্য এবং তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপাস্য নেই।
যদি ত্রিত্ববাদের (অর্থাৎ তিনের সমন্বয়ে এক ঈশ্বরে বিশ্বাসের) উপরে মুক্তি তথা অনন্ত জীবন নির্ভর করতো তবে নিশ্চয়ই তা তাওরাত এবং অন্যান্য ভাববাদীদের গ্রন্থগুলোতে প্রথম আদেশ হিসেবে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হতো।তাহলে যীশু বলতেন:-“প্রথম আজ্ঞা এই,যিনি তিনটি প্রকৃত ও সম্পূর্ণ পৃথক সত্ত্বার অধিকারী /তিনি তিনের সমন্বয়ে একজন ঈশ্বর।”অথচ এইরূপ কোন কথা কোন তাওরাত সহ কোন ভাববাদীদের কিতাবের মধ্যে উল্লেখ করা হয় নাই।
নোট:(মার্ক ১২:২৮-৩৪)-ভার্সে ইহুদিদের একজন শিক্ষক সকল আদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম আদেশ জানতে চাওয়ায় যীশু ঈশ্বরের একত্ববাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, যা শুনে উক্ত শিক্ষক ঈশ্বরের একত্ববাদে সাক্ষ্য দিয়ে যীশুর কথাকে সত্য বলে স্বীকার করেন।আর যীশু উক্ত ইহুদি আলেমের প্রতিরোত্তরে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন যে,”তিনি স্বর্গরাজ্যের খুব নিকটে তথা জান্নাতী।”অর্থাৎ উক্ত ইহুদি পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছে “একমাত্র ঈশ্বর ব্যতীত দ্বিতীয় কেউই নেই।” যীশুও ইহুদি আলেমের এরুপ ঈশ্বরের একত্ববাদের সাক্ষ্য শুনে তাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।আর ইহুদিরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে না।