Advertise with Anonymous Ads
ফাযায়েলে আমল বইয়ে বর্ণিত হাদিসের নামে বা ধর্মের নামে বা ইসলামের নামে প্রচলিত মিথ্যা বর্ণনা বা গল্প বা কাহিনী ।
এই হাদীসটি ফাজায়েলে আমলের মধ্যে এভাবে পাওয়া যায়-
“আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) হুজুরেপাক (সাঃ) এর এরশাদ বর্ণনা করিয়াছেন যে , জিকিরে খফি যাহা ফেরেস্তারাও শুনিতে পায় না , তাহা সত্তর গুণ বর্ধিত হইয়া যায় । কেয়ামতের দিবস সমস্ত হিসাব নিকাশ যখন শেষ হইয়া যাইবে তখন আল্লাহ পাক বলিবেন , অমুক বান্দার কোন আমল বাঁকী রহিয়াছে কি ? তখন কেরামান কাতেবীন বলিবেন , আমাদের লিখিত সমস্ত আমলই আমরা পেশ করিয়াছি । তখন আল্লাহ তায়ালা বলিবেন , আমার নিকট তাহার এমন আমল রহিয়াছে যাহা তোমাদের জানা নাই । উহা হইল “জিকিরে খফি” অন্য রেওয়ায়েতে আছে , যেই জিকির ফেরেস্তাগণ শুনিতে পায় না উহা জিকিরে জলির উপর সত্তর গুণ বেশী ফজীলত রাখে” ।
কবি বলিলেন , অর্থাৎ “প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে এমন সব রহস্য রহিয়াছে যাহা ফেরেস্তাগণও জানিতে পারে না” (ফাজায়েলে আমাল , ফাজায়েলে জিকির অধ্যায় , ৩০৫ বা ২৫৫ পৃঃ)
এই বানোয়াট মিথ্যা বর্ণনা সম্পূর্ণ কুরআন ও সহিহ হাদিস বিরোধী । আসুন একটু যাচাই করে দেখি:
লক্ষ্য করুন কবিতায় যে প্রেমিক-প্রেমিকার কথা বলা হয়েছে , তা আল্লাহর শানে ব্যবহৃত হইতে পারে না , কারন আল্লাহ পুরুষ নন এবং স্ত্রীও নন । তিনি প্রেমিক /প্রেমিকা হবেন কিভাবে ? আল্লাহর শানে স্ত্রী বা পুংলিঙ্গ সূচক শব্দ ব্যবহার কি অজ্ঞতা ও বাতিল আক্বীদার বহিঃপ্রকাশ নয় ? আল্লাহর সঙ্গে বান্দার মুহাব্বাত হতে পারে , কিন্তু ইশক হতে পারে না । কারন ইশকের মধ্যে পাগলামী আছে যা সৃষ্টি বা মাখলুকের সঙ্গে চলে । খালিক অর্থাৎ স্রষ্টার সাথে ইশক চলে না ।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকদ্বয়) সম্পর্কে কুরআন কারীমে বলেছেন :
“আর অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে । কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকদ্বয়) ।‘তারা সব জানেন তোমরা যা করছো” । – সূরা ইনফিতার : ১০-১২ ।
আয়াতটি ভাল করে পড়ুন এবং বুঝুন । এখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে , বান্দা যে সব ‘আমল করে কিরামান কাতিবীন ফেরেস্তাদ্বয় তা সবই জানেন । আর লিখক সনদবিহীন হাদীস আর কবিতা বর্ণনার ভিত্তিতে বলেছেন ‘জিকিরে খফি’ নাকি ফেরেস্তারা জানে না ।
সূরা কাহাফ আয়াত ৪৯-এ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
“আর তারা বলবে , আফসোস (আমাদের জন্য দুর্ভগ্য) এটা কেমন আমলনামা এতে ছোট (খফি) বড় কোন গুনাহই লিপিবদ্ধ করা ব্যতীত ছেড়ে দেয়া হয়নি ? যা কিছু তারা করেছে , তার সব কিছুই তারা লিখিত আকারে উপস্থিত পাবে । আপনার রব , কারো উপর যুলুম করেন না (করবেন না )”
পড়ুন এবং বুঝুন – বান্দাগণ স্বীকার করবে যে , তাদের আমলনামা ছোট-বড় কিছুই বাদ পড়েনি , সবই তাতে আছে ।
আরও একটি আয়াত দেখুন । সূরা বনী-ইসরাঈল : ১৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন : পড় তোমার কিতাব (আমলনামা) । আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট ।
এই আয়াতের বর্ণনামতে যদি একজন ব্যক্তি তার আমলনামার ভিত্তিতেই নিজের হিসাব করতে পারে যে সে জান্নাতী নাকি জাহান্নামী । তাহলে বলুন একজনের কিছু নেক আমল যদি আমলনামার বাহিরে থেকে যায় তাহলে সে কি তার হিসাব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হবে ?